Islamic stories-ইসলামিক গল্প (part 1)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
গল্পে গল্পে জীবন
(দোস্তহুজুর)
(part 1)
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমটা কেন ভাঙল? কোনও আওয়াজ ছাড়া তো ভাঙার কথা নয়। তখনি শুনতে পেলাম, ভাই কার সাথে যেন ফিসফিস করে কথা বলছেন। এত রাতে এমন লুকিয়ে লুকিয়ে কার সনে কথা হচ্ছে? নাহ, ভাবীর সাথে গল্প করছেন। ধন্য ভাই-ভাবীর অমন ‘নিশিরাইতি’ পিরিতি। দু’জনে ফিসফাস করছেন তো করছেনই। এটা তাদের নিয়মিত রুটিনকথনের অংশ। প্রতিদিন তাহাজ্জুদ পড়ার আগে একবার কথা বলেন। তাহাজ্জুদের পরে একবার কথা বলা তো বাঁধা। ফজরে জামাতে যাওয়ার আগে আরেকবার, ফজরের পরে একবার কথা বলা রীতিমতো ফজরের রোকনের মধ্যেই পড়ে। তাহাজ্জুদ-ফজরের আগে কথা বলেন, কোন কেরাত পড়বেন সেটা নিয়ে। নামাজ শেষে ফোন করে বলেন, কেমন পড়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা এই কেরাতে কী বলেছেন। সেই সূত্র ধরে আলোচনা প্রলম্বিত হয় দুনিয়ার নানা বিষয়ে। বাড়ির হাঁসের আধার দেয়া থেকে শুরু করে, বাড়ির বেড়ালটার লেজনাড়া পর্যন্ত। একদিন শুনলাম বাড়ির ইঁদুরগুলোর গর্ত নিয়েও দু’জন গভীর আলোচনায় মগ্ন। আহা, ভালোবাসা থাকলে, তুচ্ছ বিষয় নিয়েও অত্যুচ্চ আলোচনা করা যায়। সাধারণ বিষয়ের আলোচনাকেও অসাধারণ পর্যায়ে উন্নীত করা যায়।
ফজরে-তাহাজ্জুদে কোন কেরাত পড়বেন, সেটা নিয়েও প্রতিদিন এত গুরুত্বের সাথে জামাই-বউ আলোচনা করা যায়, ভাইকে দেখার আগে কখনো মাথাতেই আসেনি। ভাইয়ের কথা হল, একটা বয়েসের পর, সার্বক্ষণিক বন্ধু বলে কেউ থাকে না। একমাত্র বিবি ছাড়া। আর কে আমার জন্য ফোন নিয়ে বসে থাকবে? আমি ছাড়া বিবির জন্য আর কে এমন সদাপ্রস্তুত হয়ে বসে থাকবে? এই একজন মানুষ, যার কাছে সবকিছু বলা যায়। যে আমাকে ভাল করে বোঝার চেষ্টা করে। আমাকে ক্ষমা করে। আমার দোষত্রুটি দেখেও না দেখার ভান করে। ভুল হয়ে গেলে রাগ করার চেয়ে ক্ষমার প্রতি বেশি আগ্রহ রাখে। আমি বাইরে, মাদরাসায়, জায়গীরবাড়িতে কত মানুষের সাথে মিশি। কত বিচিত্র মানুষের সাধে আমার দেখা হয়, বাড়ির মানুষটা সারাক্ষণ চারদেয়ালের মাঝে ঘুরপাক খায়। আমিই তার বাইরের চশমা। আমিই তার বই। আমিই তার জ্ঞানের যোগসূত্র। তাই আমার প্রতিটি ভাবনা, প্রতিটি চিন্তা তার সাথে লেনদেন করি। প্রথম প্রথম বুঝত না। তবে বেজায় আগ্রহ নিয়ে শুনত। হুঁ হাঁ করে যেত। এখন মা শা আল্লাহ, সব বোঝেন। আমি যেখানেই যা বয়ান করি, মোবাইলে কল করে তাকে শোনাই। মিশকাত বা জালালাইন বা তাফসীরে বয়যাবীর দরসে গুরুত্বপূর্ণ কোন কথা থাকলে, মোবাইলে তাকে কল করি। তিনি ঘরে বসে মনোযোগ দিয়ে শোনেন। দরসের পরে তার কাছে জানতে চাই, আলোচনার ভঙ্গিতে কোনও সমস্যা আছে কি না। কোথাও বুঝতে অসুবিধে হয়েছে কি না। তিনি নিরপেক্ষ সমালোচনা করেন। প্রতিবছরইতো এই আলোচনা শোনেন। শুনতে শুনতে অভিজ্ঞতা হয়েছে। নিজের মতামত প্রকাশ করার সহজাত যোগ্যতা হয়েছে।
.
ভাইকে এলাকাবাসী ভীষণ ভালোবাসে। বিদেশ থেকে কেউ দেশে এলে, তাদের অনেকেই প্রথম মসজিদে এসে হুজুরের সাথে দেখা করে যায়। সকাল-বিকেল এসে হুজুরের সাথে কথা বলে যায়। নিজের বিদেশযাপনের গালগল্প শুনিয়ে যায়। এটাসেটা হাদিয়া দিয়ে যায়। ভাইয়ের বাড়ির জন্যও কিছু না কিছু হাদিয়া থাকে। এমনকি ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের জন্যও। শুধু পুুরুষরাই নয়, ঘরের নারীরাও হুজুরকে মন থেকে শ্রদ্ধা করে। ভাই যেবার হজে গেলেন, মীনায় দুর্ঘটনা ঘটল। তারপর মক্কায় ক্রেন পড়ে অনেক মানুষ হতাহত হল। কোত্থেকে খবর রটল, হুজুরও মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন। মসজিদবাড়ির মহিলারা এমন মড়াকান্না শুরু করল, তাদের পেটের সন্তান মরলেও এমন কাঁদত না। তারা সকাল-সন্ধ্যা হুজুরের থাকার ঘরে এসে উঁকি মেরে দেখে যেত। হুজুরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখে, হুজুরকে দেখার আশ মেটাত। কয়েকজন একসপ্তাহ পর্যন্ত ভাত খেতে পারেনি। শোকের আতিশয্যে। শুনতে অতিশোয়ক্তি মনে হলেও, বাস্তবে এমনটাই ঘটেছিল। পরে খবর এল, হুজুর সুস্থ্য আছেন। ভালো আছেন। নিরাপদ আছেন। সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। পুরো এলাকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বাঁচল। পুরো গ্রামে শোকের গভীর ছায়া নেমে এসেছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই গ্রামের লোকেরা থাকে। তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ফোনের পর ফোন করে, হুজুরের খবর নিচ্ছিল। দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় পড়াশোনা করতে যাওয়া ছাত্ররা ঘরে ফিরে এসেছিল শোকের ভার লাঘব করতে। ভাই অক্ষত আছেন, এই খবরে গ্রামে যেন ঈদের আনন্দ নেমে এসেছিল। ভাইকে ঢাকা বিমানবন্দরে বিদায়া জানাতে দুই হায়েসভর্তি লোকজন গিয়েছিল। আসার সময় রীতিমতো ছোটখাট মিনিবাস। ঢাকায় পড়তে যাওয়া ছাত্ররা তো বটেই, বিভিন্ন শহর থেকেও তালিবে ইলমরা দলে দলে এসেছিল।
.
মাঝেমধ্যে পরিকল্পনা করেই সকালে নাস্তা করতে বের হন। ধানকাটার মৌসুমে মাঝেমধ্যে চা-দোকানে গিয়ে বসেন। গ্রামে দূর থেকে কামলা-কামীনরা আসে। তারা কাজে নামার আগে দোকানে নাস্তা করে। ভাই তাদের সাথে আলাপ জমান। কে কোথা থেকে এসেছে, ঠিকানা সংগ্রহ করেন। ফাঁকে ফাঁকে দ্বীনের দু‘চারটা কথা শুনিয়ে দেন। তারা রাতে কোথায় থাকে জেনে নেন। মাগরিবের পর তাদের ডেরায় গিয়ে ওঠেন। যাওয়ার সময় তাদের জন্য হালকা কিছু নাস্তা নিয়ে যান। মুড়ি-চানাচুর, বুট-মুড়ি ইত্যাদি। সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর, বিনে পয়সার পেটফুর্তি খাবার কে বা খেতে না চায়? ভাই বসে বসে গল্প জমিয়ে তোলেন। সুযোগ বুঝে নামাজ শেখান। দোয়া-দুরুদ শেখান। বিড়ি-সিগারেট, পান-তামাক খেয়ে অযথা টাকা নষ্ট না করার পরামর্শ দেন। গরীব মানুষগুলো বর্তে যায়। তারা এমন আন্তরিক নসীহত আগে শোনেননি। দলে দুয়েকজন হিন্দুও থাকে। তারাও বেশ আগ্রহ করে বয়ান শোনে। আলাপে অংশ নেয়। ভাইয়ের কথা বলার ভঙ্গিটাই এমন, কেউ আপন না হয়ে পারে না।
.
মাসে কমপক্ষে দুইবার আশপাশের স্কুলগুলোতে হাযির হন। প্রধান শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। সম্পর্ক ধরে রাখেন। স্কুলে গিয়ে ছুটির আগে পাঁচ-দশমিনিট দ্বীনের কথা বলেন। খালি হাতে যান না। সাথে থাকে চকলেট। ছোট্ট শিশুরা চকলেট চুষতে চুষতে তন্ময় হয়ে হুজুরের গল্প শোনে। ভাই সাধারণত স্কুলের বয়ানে গল্প বলেন। গল্পের ফাঁকে কুরআনের আয়াত ও হাদীস টেনে আনেন। ছেলেমেয়েরা টেরও পায় না, গল্পের ছদ্মাবরণে তারা কীসব মহান কথা শিখে ফেলছে। এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান-এমপিরাও ভাইকে বেশ গুরুত্ব দেয়। ভাই সুপারিশ করে স্কুলের জন্য বিভিন্ন সময়ে অনুদান আনার ব্যবস্থা করে দেন। স্কুলকমিটি এজন্য বড়ভাইয়ের কথা ফেলতে পারে না। ভাইয়ের কারণেই হোক বা অন্য কারণে, গ্রামে ছোটবড় সবার মধ্যে সালামের বেশ প্রচলন। বেশ আর কম প্রায় সবাই মোটামুটি কুরআন কারীম পড়তে পারে। গ্রামের মহিলারা বোরকা পরে বের হয়। ছেলে-বুড়ো সবারই দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আছে।
.
মসজিদের মক্তবে পড়ার পর, বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে চলে যায়। আশেপাশে মাদরাসা নেই। স্কুলে চলে যাওয়া ছাত্রদের নিয়ে মাগরিবের পর পড়ার আসর বসান। স্কুলে ভালো ফলাফল করলে, নিজের খরচে মসজিদের পক্ষ থেকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন। মেয়েরা ভালো ফল করলে, তাদের পুরস্কার বাড়িতে পৌঁছে দেন। হিন্দু ছেলেমেয়েরাও পুরস্কার পায়। ভিনগাঁয়ের কেউ ভালো করলে, তার কাছে পুরস্কার পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। আহামরি কিছু নয়, একটা কলম বা একটা খাতা। একটা গ্লাস বা একটা বাসন, এমনই হয়ে থাকে পুরস্কারগুলো। জিনিসটা ছোট হলেও, ছোটরা ভীষণ আগ্রহের সাথে পুরস্কার গ্রহণ করে। অনুপ্রাণিত হয়। সম্মানিত বোধ করে।
.
ভাইয়ের দাওয়াতের পদ্ধতিটাও বেশ কার্যকর। বিকেলে হাঁটতে বের হন। রাস্তায় কতজনের সাথে দেখা হয়। একদিন হাঁটতে বের হয়েছি। ভাই বললেণ, চলুন একমিনিটের মাদরাসায় দরস করে আসি। প্রথমে বুঝতে পারিনি, একমিনিটের মাদরাসা মানে কী? প্রশ্ন না করে পিছু নিলাম। কাজ শুরু হলেই বোঝা যাবে। রিকশা যায়, সাইকেল যায়, টমটম যায়। পরিচিতদের থামিয়ে একমিনিট দ্বীনের কথা শোনান। দোকানে গিয়ে দোকানদারকে একমিনিট বয়ান করেন। কোন ওয়াক্তে কত রাকাত সেটা শুনিয়ে দেন। কাউকে আল্লাহর পরিচয় বলেন। কাউকে নবীজি সা.-এর বিশেষ কোনও গুণের কথা বলেন। কাউকে একটা আয়াত পড়ে তরজমা শুনিয়ে দেন। কাউকে একটা হাদীস শোনান। কারও হাতে সময় থাকলে, রাস্তায় বা দোকানের সামনে দাঁড়িয়েই কিভাবে নিয়ত বাঁধবে, কীভাবে রুকু করবে, নিজে করে দেখিয়ে দেন। তাবলীগের গাশতের আমল হিশেবে কাজটা করেন। খুসুসী ও উমূমী গাশত একসাথে করেন। তাবলীগের প্রচলিত গাশতের পদ্ধতিতে অনেকে ভয় পেয়ে আত্মগোপন করতে উদ্যত হয়। ভাইয়ের একমিনিট পদ্ধতিতে কেউ পালাতে চায় না। সবাই জানে, একমিনিটের বেশি তাকে দাঁড়াতে হবে না। হাসিমুখেই কথা শোনে।
ভাই একমিনিট করে বিভিন্ন বক্তব্য মনে মনে সাজিয়ে রাখেন। কার্যকালে কথা হাতড়াতে হয় না। শ্রোতা পেলেই তার অবস্থা বুঝে একটা ‘মিনিটওয়াজ’ গুছিয়ে শুনিয়ে দেন। অতিরিক্ত কোনও কথা বলেন না। ভাইয়ের বলার ভঙ্গি অত্যন্ত আন্তরিক আর ঘরোয়া। কেউ অস্বস্তি বোধ করে না। উসখুশ করে না। ভাইয়া কাউকে প্রশ্ন করে বিব্রত করেন না। নিজে প্রশ্ন করে, নিজেই উত্তর দেন। এমনভাবে কথা বলেন, শ্রোতা যেন আগে থেকেই বিষয়টা জানেন, দ্বীনের কথা বারবার শুনলে সওয়াব হয়, উপকার হয় বলেই কথাটা আবার শোনাচ্ছেন।
.
ভাই সবাইকে চেনেন। কাকে দ্বীনের কোন কথা শোনাচ্ছেন, সেটা মনে রাখার চেষ্টা করেন। পরেরবার দেখা হলে যাতে নতুন কথা শোনাতে পারেন। এভাবে ‘মিনিটওয়াজ’ করার জন্য বড়ভাইকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। পুরো কুরআন আর হাদীসের কিতাব নিয়মিত ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। বেশ আনন্দ আর উৎসাহ নিয়েই এটা করেন।
click here for our facebook page
(please visit our website for another part 2)
.
(part 1)
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমটা কেন ভাঙল? কোনও আওয়াজ ছাড়া তো ভাঙার কথা নয়। তখনি শুনতে পেলাম, ভাই কার সাথে যেন ফিসফিস করে কথা বলছেন। এত রাতে এমন লুকিয়ে লুকিয়ে কার সনে কথা হচ্ছে? নাহ, ভাবীর সাথে গল্প করছেন। ধন্য ভাই-ভাবীর অমন ‘নিশিরাইতি’ পিরিতি। দু’জনে ফিসফাস করছেন তো করছেনই। এটা তাদের নিয়মিত রুটিনকথনের অংশ। প্রতিদিন তাহাজ্জুদ পড়ার আগে একবার কথা বলেন। তাহাজ্জুদের পরে একবার কথা বলা তো বাঁধা। ফজরে জামাতে যাওয়ার আগে আরেকবার, ফজরের পরে একবার কথা বলা রীতিমতো ফজরের রোকনের মধ্যেই পড়ে। তাহাজ্জুদ-ফজরের আগে কথা বলেন, কোন কেরাত পড়বেন সেটা নিয়ে। নামাজ শেষে ফোন করে বলেন, কেমন পড়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা এই কেরাতে কী বলেছেন। সেই সূত্র ধরে আলোচনা প্রলম্বিত হয় দুনিয়ার নানা বিষয়ে। বাড়ির হাঁসের আধার দেয়া থেকে শুরু করে, বাড়ির বেড়ালটার লেজনাড়া পর্যন্ত। একদিন শুনলাম বাড়ির ইঁদুরগুলোর গর্ত নিয়েও দু’জন গভীর আলোচনায় মগ্ন। আহা, ভালোবাসা থাকলে, তুচ্ছ বিষয় নিয়েও অত্যুচ্চ আলোচনা করা যায়। সাধারণ বিষয়ের আলোচনাকেও অসাধারণ পর্যায়ে উন্নীত করা যায়।
click here for our facebook page
(please visit our website for another part 2)
কোন মন্তব্য নেই