Header Ads

Header ADS

Islamic stories-ইসলামিক গল্প (part 2)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

গল্পে গল্পে জীবন
(দোস্তহুজুর)
(part 2)
)










ভাইয়ের মিনিট-মাদরাসায় শুধু ছাত্রই নয়, ছাত্রীও আছে। মাঝমধ্যে রাস্তা ছেড়ে বাড়িতেও ঢুকে পড়েন। গলাখাঁকারি দিয়ে ছোট্ট কোনও ছাত্রীর নাম ধরে ডাকেন। গলা উঁচিয়ে বলেন, সবাই একমিনিটের জন্য কাজ বন্ধ করে উঠোনের দিকে তাকান। তিনি ছোট্ট ছাত্রীটিকে উঠোনের মাঝামাঝিতে দাঁড় করিয়ে নামায শেখান। নামাযের দোয়া পড়ান। কখনো নারী বিষয়ক বয়ান করেন। মিনিটবয়ানশেষে আবার পথে নামেন। নতুন কোনও বাড়িতে প্রবেশ করেন।
ভাইয়ের কাছে একটা বড় খাতা আছে। সেটাতে বাড়ির তালিকা আছে। গেরস্থদের পরিসংখ্যান আছে। কোন ঘরে কতজন সদস্য তার বিবরণ আছে। বয়েস পেশাসহ। মাগরিবের পরপরই খাতাটা নিয়ে বসেন। আজ কোনবাড়িতে কী বয়ান করলেন, সেটার ইঙ্গিতে লিখে রাখেন। আসরের আগে, খাতাটা খুলে দেখে নেন। আজ যে বাড়িতে যাবেন, সেখানে আগে কোন কোন বিষয়ে বয়ান হয়েছে। নামাজের কোন কোন রোকন প্রদর্শনী হয়েছে। এসব কাজে ভাইয়ের গোছালো পরিকল্পনা দেখলে, অবাক হয়ে যেতে হয়। বাহ্যিকভাবে তাকে দেখলে মনেই হয় না, তিনি এত গুছিয়ে চিন্তা করতে পারেন বা কর্মপরিকল্পনা করতে পারেন। আল্লাহ যাকে দিয়ে কাজ নেন, তাকে যোগ্য করেই গড়ে নেন।
.
সময়টা বাধা থাকাতে, অতিরিক্ত কথা বা গল্পের সুযোগ নেই। আঁটসাঁট বাঁধুনিতে কথার মালা গাঁথতে হয়। কখনো অবশ্যি শ্রোতার পক্ষ থেকে আরও কথা বলার অনুরোধ আসে। তখন সময়সীমা বাড়ে। তাও বড়জোর পাঁচমিনিট। এর বেশি মোটেও নয়। বড়রা তো বটেই, ছোটরাও দ্বীনের মৌলিক আকীদা সম্পর্কে বেশ সচেতন। ভাইয়ের মিনিটবয়ানে মাসয়ালা থাকে। তথ্য থাকে। তত্ত্বও থাকে। এসব অবশ্যই কোনও আয়াত, হাদীস বা সীরাতকে ঘিরে হয়ে থাকে।
.
ভাবীর প্রতি ভাইয়ের ভালবাসাটা গ্রামজুড়ে সবার জানা। ভাইয়ের আত্মীয় মহলেও জানাজানি আছে। ভাইয়ের এক ভাগ্নী বলে,
‘মামা আপনি মামীকে যতটা ভালোবাসেন, কই আমাদের স্বামীরা তো আমাদেরকে সেভাবে ভালোবাসে না?’
ভাই মিটিমিটি হাসেন। কিছু বলেন না। সকালে মক্তব পড়ানোর সময়, কেউ ভাল করে পড়া শিখলে, মোবাইলে কল করে পড়াটা শুনিয়ে দেন। জীবনের প্রতিটি আনন্দময় কাজেই ভাবীকে স্মরণ করেন। শুধু কি আনন্দ? বেদনাতেও স্মরণ করেন। একটা কিছু ঘটলেই ফোন করেন। মত বিনিময় করেন। কাছে থাকলে বোঝা যায়, ভাইয়ের জীবনজুড়ে আছেন আল্লাহ তা‘আলা। আর আছেন ভাবী। মেড ফর ইচ আদার। একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে নিয়ে কতটা বুঁদ হয়ে থাকতে পারেন, ভাইকে না দেখলে বোঝা যাবে না।
.
ভাইয়ের টাচ মোবাইল ছিল। আজেবাজে কাজে সময় নষ্ট হয়ে যায়। ভাবীর অনুরোধে বাদ দিয়েছেন। তাঁর কথা হল, আল্লাহ আমাকে বানিয়েছেন ইবাদতের জন্য। মোবাইলের পেছনে অহেতুক সময় নষ্ট করার জন্য নয়। মোবাইল অন্যদের হয়তো দ্বীনি কাজে লাগে, আমি পারিনি। তাই বাদ দিয়েছি। এখন দু’জনের কাছেই টিপ-মোবাইল। মোবাইলের বিল ওঠে? উঠুক না। কথা বলা ছাড়া আমাদের ভিন্ন কোনও বিনোদন নেই। তাছাড়া দু’জনে কথা বলা নিছক বিনোদনই-বা হতে যাবে কেন? বিবির সাথে কথা বলা ইবাদত। যে ইবাদতে মনে অপার সুখ আর আনন্দ হয়, তা বাদ দেব কেন? কুরআন কারীম তিলাওয়াতে প্রতি হরফে দশ নেকি করে হলে, ঘরনির সাথে কথা বললেও, আশা করি আল্লাহ তা‘আলা নিরাশ করবেন না। দ্বীনের কাজে একটাকা খরচ করলে, সাতশগুণ সওয়াব পেলে, ‘জানপরান দোস্তের’ সাথে কথা বললেও আশা করি, তেমন কিছুই মিলবে। যে কোনও আন্তরিক ইবাদতেই মনে সুখ আর প্রশান্তি আসে। এটা পরীক্ষিত। জানীদোস্তের সাথে কথা বললে, দ্বীন ও দুনিয়া উভয় জাহানেই সুখ আসে। সমৃদ্ধি আসে।
.
কিছু স্বামী থাকেন খোকাস্বভাবী। বয়েসকালেও বুড়োখোকার মতো থেকে যান। সংসারে সবকিছুর ভার স্ত্রীকে নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয়। স্বামী শুধু টাকা রুজি করেই খালাস। কিছু স্ত্রী থাকেন ‘মা-স্বভাবী’। স্বামীকে, সংসারকে মায়ের আদর আর মমতা দিয়ে আগলে রাখেন। ভাই-ভাবীর সংসার হুবহু এই ধাঁচের। আল্লাহ তা‘আলা জোড়া মিলিয়েছেন চমৎকার করে। আল্লাহর সবকাজই চমৎকার। নিপুণ। নিখুঁত। অকাট্য।
.
ভাইয়ের ঘরে বসলে থেকে থেকে কীসের যেন সুবাস আসে। গাদাফুলের পাতা কচলালে, যেমন গন্ধ বেরোয়, ঠিক তেমন। সাথে পাটায় বাটা মেহেদির সুবাস। ঘর ছেড়ে বের হয়ে, নাক উঁচু করে ঘ্রাণের উৎস খোঁজার চেষ্টা করেছি। পারিনি। মসজিদের পূর্বপাশে কবর আছে। সেখান থেকেই কি? কতরকমের গাছ আছে কবরস্তানে। ফুলগাছও আছে। কড়ই আর মেহেদি গাছও আছে একটা। লেবুফুল ফুটে আছে। কচুর ফুলও আছে। সবমিলিয়েই কি সুবাসটা তৈরি হয়ে নাকে লাগে?
.
ভাইয়ের হচ্ছ বালিশ ঘুম। বালিশে মাথা লাগানো মাত্র ঘুম। ঘুম আসতে যেমন দেরি হয় না, ভাঙতেও দেরি হয় না। গভীর ঘুমে রীতিমতো কাদা; তাহাজ্জুদের সময় হলে দেখা যায়, নাকডাকা ঘুম থেকেও দিব্যি চট করে উঠে বসেছেন। নির্বিকার ভঙ্গিতে মিসওয়াক হাতে নিয়ে ‘হাম্মামে’ চলে যাচ্ছেন। এতক্ষণ যেন জেগেই ছিলেন। তাহাজ্জুদ পড়ে কিছুক্ষণ যিকির করেন। যিকিরের মৃদু গুঞ্জরণে রাতের নিস্তব্ধতায় এক ঘোর লাগা আবহ তৈরি করে। মৌমাছির বাসা থেকে মৃদু মিষ্টি একটা গুঞ্জন বের হয়। মনোযোগ দিয়ে কিছুক্ষণ শুনলে, ভালোলাগার আবেশ আচ্ছন্ন করে ফেলে।
.
নাক ডাকার প্রসঙ্গ ওঠাতে, ভাই সেদিন এক মজার গল্প বললেন। বাসর রাতে কেউ ঘুমোয়? ভাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। জাগানো হল কীভাবে? সে এক ব্যাপর। ভাবী দেখলেন তিনি ঘুমুচ্ছেন, কী করা যায়, কী করা যায়? মাথায় বুদ্ধি এল। ওনার নাকে কিছু একটা দিয়ে সুড়সুড়ি দিতে হবে। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে বিছানার নিচ থেকে হাত দিলেন। পাটির কোনা থেকে আঁশ ছিঁড়ে নাসারন্ধে চিড়বিড়ি দিলেন। প্রথমবার সাপের মতো ফোঁস করে উঠে আবার পাশ ফিরে ঘুমুতে লাগলেন। বড় মায়া লাগল। একবার ভাবলেন, থাক বেচারা ক্লান্ত। ঘুমিয়ে থাকুক। পরক্ষণে মনে হল, এত সুন্দর একটা রাত বসে বসে কাটিয়ে দেব? আবার সুড়সুড়ি। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আবার ঘুম। লাভ হল এই, ওনার ঘুম হালকা হয়ে এসেছে। তৃতীয়বাবে ভালোমতো দেয়া হল। ভাই ধরমর করে উঠলেন। আমি তাড়াতাড়ি চোখ বুজে ঘুমের ভান করে মটকা মেরে গুটিসুটি মেরে রইলাম। পিটপিট করে দেখছি, উনি কী করেন!
.
ভাই ভেবেছিলেন নাকে পিঁপড়া ঢুকেছে। জোরে জোরে নাকঝাড়া দিলেন। সম্বিত ফিরে চমকে উঠলেন। হায় আল্লাহ, আজকের মতো রাতেও কোনও উজবুক ঘুমিয়ে পড়ে! গত তিনচারদিন হাড়ভাঙা খাটুনি গেেছ, তাছাড়া দৌড়াদৌড়িতে আগের দুই রাত একফোটা ঘুমুতে পারিনি। আহা, বেচারি বোধ হয় আমার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। জাগাব? হাত দিয়ে জাগাতে লজ্জা করছে যে! আচ্ছা মাথায় হাত বুলিয়ে দেই? মাথায় হাত দিতেই উনি চমকে ওঠার ভান করে জেগে উঠলেন। তারপর আর কি...!
.
ভাই বলেন, মেয়েদের মতো শক্তিশালী বস্তু আল্লাহ খুব কমই বানিয়েছেন। রেহানা প্রথম প্রথম কী লাজুক ছিল! এত লাজুক ছিল, কারও সামনে ‘হাম্মামে’ প্রবেশ করতেও মারাত্মক সংকোচে পড়ে যেত। আমাদের বাড়িতে প্রথমদিন এসে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধৈর্য ধরে বসেছিল। অনেক বেশি প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও, লজ্জায় কাউকে বাইরে যাওয়ার কথা বলতে পারেনি। আমি অবাক হয়ে ভাবি, এমন লাজুক মেয়ে কীভাবে বাসর রাতে দুঃসাহসিক কা- ঘটাতে পারল? আসলে তিনি অপরিচিত পরিবেশে লাজুক। পরিচিত গ-ীতে ভীষণ দুষ্টু। আমরা তো বিয়ের আগে থেকেই কিছুটা পরিচিত ছিলাম। যদিও তাকে কখনো দেখিনি, কিন্তু অনেক আগে থেকেই তার বাড়িতে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল, সে এই বাড়িতে বউ হয়ে আসবে। দু’জনের বাবা একসাথে তাবলীগ করতেন। প্রতি সপ্তাহে একরাত আর একসকাল, শবগুজারির দিন মারকায মসজিদে একসাথে থাকতেন। ঈদে-চান্দে তাদের পুরো পরিবার আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসত। আমরাও যেতাম। তাছাড়া বিভিন্ন উপলক্ষ্যে ছুতো ধরে আমি আর বাবা তাদের বাড়িতে দাওয়াত পেতাম। আমি বোকা বলে বুঝতে পারিনি। ভেতরে ভেতরে কিছু একটা ঘনিয়ে আসছে। আমার অজান্তে ঘটনা ধীরে ধীরে একটা সুনির্দিষ্ট পরিণতির দিকে যাচ্ছে। দিনে দিনে একটা অলিখিত সম্পর্ক পাকিয়ে উঠছে।
.
বিয়ের গল্প শুনতে চেয়েছিলাম। ভাই বেশ আগ্রহ করে গল্প শুরু করলেন। তিনি গল্পবলা শুরু করলে, শ্রোতাদের মধ্যে এক ধরনের ঘোর তৈরি হয়,

‘একদম ছোটবেলা থেকেই মায়ের ইচ্ছা ছিল, বোনের মেয়েকে বৌ করে আনবেন। সেমতেই আঘোষিতভাবে খালাত বোন এই বাড়ির বউয়ের সম্মানে ভূষিত ছিল। সমস্যা ছিল খালুরা বিরাট বড়লোক। খালাতবোন ঢাকায় স্কুলে পড়ে। টাকা এলে যা হয় আরকি! অনেক পরিবারে দ্বীনের বাঁধন আলগা হয়ে পড়ে। নিজের ভায়রার সাথে সম্পর্ক ভালো থাকলেও, তার দ্বীনদারির ব্যাপারে আব্বুর ঘোরতর আপত্তি ছিল। শালীর পর্দাপুশিদা নিয়েও তিনি খুঁতখুঁত করতেন। তার ফেরেশতার মতো ছেলেটা এমন ঘরে জামাই হলে, পরে কষ্ট পেতে পারে। মেয়েটা অবশ্যই ভাল। বুঝ-সমঝও বেশ। কিন্তু ছেলেটা যে মানের দ্বীনদার, মেয়ে সে মানের নয়। বিয়ের পর অনেক সময় স্বামীর প্রভাবে মেয়েরা বদলে যায়। বদলে যায় না, এমনোতো হয়। ছেলের ভাগ্যে যদি এমন হয়ে যায়? মেয়েটা প্রাচুর্যের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। এখন হয়তো বয়েস বা আত্মীয়তার পুরনো টানে, হুজুর জামাইয়ের সাথে বিয়েতে আপত্তি করছে না। মা-খালাও তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু বিয়ের পর, সংসারজীবনে প্রবেশ করলে, দ্বীনদারির আসল পরীক্ষা হয়। তাই আগে থেকে দ্বীনদারি না থাকলে, পরে পরিবর্তন হবে, এই আশায় সংসার করার সিদ্ধান্ত নেয়াটা ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। বিয়ের আগে দ্বীনদার থাকলে, বিয়ের পরও দ্বীনদার থাকবে, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু হাদীসে আছে, দ্বীনদারি দেখে বিয়ে করতে। বিয়ের পর কী হবে না হবে, সেটা নিয়ে ভাবতে বলেনি।
(Please Visit Our Website For Part 3)

কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.