Header Ads

Header ADS

Life Experiance part 1




⇛দিনলিপি ১⇐


গুণবিচারি দর্শনধারী!

১: একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘আগে দর্শনধারী তারপর গুণবিচারী।’। মানে, আগে দেখতে শুনতে ভাল লাগে কি না দেখতে হবে। তারপর গুণাগুণ বিচার করতে হবে।
২: পাত্রী দেখতে গেলে, বাজার করতে গেলে, এছাড়াও নানা প্রসঙ্গে অনেকেই এই বাক্য আওড়ায়। পাত্রী সুন্দর না গুণধর? রূপবতী না গুণবতী? আগে কোনটা বিবেচনায় আসবে? রূপ না গুণ?
৩: কুরআন বলে আগে গুণ তারপর রূপ। জীবনসঙ্গী নির্বাচনে কুরআনি মূলনীতি অনুসরণ করাই নিরাপদ। জান্নাতি হুরদের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন,
فِیهِنَّ قَـٰصِرَ ٰ⁠تُ ٱلطَّرۡفِ لَمۡ یَطۡمِثۡهُنَّ إِنس قَبۡلَهُمۡ وَلَا جَاۤنࣱّ
সেই উদ্যানসমূহের (জান্নাতে) মধ্যে থাকবে এমন আনত নয়না (নারী), যাদেরকে জান্নাতবাসীদের আগে না কোনও মানুষ স্পর্শ করেছে, না কোনও জিন (আর-রহমান ৫৬)।
৪: দৃষ্টি অবনত রাখা, জান্নাতি নারীর বৈশিষ্ট্য। জান্নাতি নারীগন শুধু স্বামীর দিকেই তাকাবেন। অন্য কোনও পরপুরুষের দিকে তাকাবেন না। এটা তাদের তাকওয়া। এটা তাদের স্বভাব। এটা তাদের ধার্মিকতা। এটা তাদের গুণ। আল্লাহ তা‘আলা আগে গুণের কথা বলেছেন। তারপর বলেছেন,
كَأَنَّهُنَّ ٱلۡیَاقُوتُ وَٱلۡمَرۡجَانُ
(সৌন্দর্যে) তারা যেন পদ্মরাগ ও প্রবাল (৫৮)।
৫: ইফফত বা চরিত্রের সূচিতা না থাকলে, নিছক সৌন্দর্য দিয়ে কী হবে? এমন সৌন্দর্য প্রথম প্রথম ভাল লাগলেও পরে বিষের মতো হয়ে যায়। কুরআনের অনুসরণে বললে, বলতে হবে,
‘‘আগে গুণবিচারী তারপর দর্শনধারী’’।
৬: একটা বিশেষ আয়োজনে, এক বিশ^বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছিল। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ডক্টর তার অফিসে ডেকে নিয়ে গেলেন। মাগরিব থেকে ঈশা পর্যন্ত তিনি অনেক অনেক কথা বললেন। মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে তার অসংখ্য পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ দিলেন। আধাঘণ্টার মধ্যে আমি আবিষ্কার করলাম, আমি এর মধ্যে তার জন্ম থেকে শুরু করে, তার দাদার নাতির বাপের দাদা থেকে শুরু করে, তার মায়ের নানার মায়ের সব আত্মীয় সম্পর্কেও জেনে গেছি। পূর্বপুরুষের ফিরিস্তি শেষ করে, এবার উত্তরপুরুষের বিবরণীতে গেলেন। শুরু হল নিজের সন্তানদের নিয়ে, পাশের গ্রামের ছলিমুদ্দীর নাতিকে নিয়ে তার কী কী পরিকল্পনা তার ফিরিস্তি।
৭: ডক্টর সাহেবের পরিকল্পনার তোড়ে ভেসে যেতে যেতে একটু ফাঁক পেয়ে ফস করে প্রশ্ন করলাম,
-ঘরে নিয়মিত কুরআন কারীম তিলাওয়াত হয়?
একটু যেন থমকে গেলেন। কী ভেবে বললেন,
-আমি চেষ্টা করি। তবে ঘরের অন্যদেরকে চেষ্টা করেও কুরআন নিয়ে বসাতে পারি না।
৮: ডক্টর সাহেবের কথার গতি এবার ঘরমুখো হল। নিতান্ত সাধারণ পোষাকের অতি সামান্য এক আলেমকে পেয়ে, কোনও কারণে হয়তো এতদিন ধরে জমতে থাকা কষ্টের ক্ষত জেগে উঠেছিল। তিনি আক্ষেপ করে বললেন,
-বিয়ের সময় বাহ্যিক রূপ দেখে বিয়ে করে কী যে ভুল করেছি ভাই! কত চেষ্টা করলাম, ঘরের মানুষটাকে দ্বীনমুখি করতে। কিছুতেই কিছু হল না। বেশি জোরাজুরি করলে, সংসার ভেঙে যাওয়ার আশংকা।
৯: মনের সমস্ত কষ্টের কথা বলে তিনি থামলেন। পরামর্শ চাইলেন। সমাধান তো খুবই সহজ। আমাদের শায়খ (প্রফেসর হামীদুর রহমান সাহেব দা. বা.) এসব ক্ষেত্রে সবসময় ঘরোয়া মাহফিলের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সৌভাগ্যক্রমে ডক্টর সাহেবের বাসার কাছেই, আমাদের শায়খ প্রতিমাসে একবার যান। পরিবার নিয়ে হযরতের মাহফিলে হাজির হতে বললাম। পাশাপাশি ঘরোয়া মাহফিল আয়োজন করতে বললাম। মাহফিলের কথা শুনে ডক্টর সাহেব রীতিমতো আঁতকে উঠে বললেন,
-ভাই, যদি বুঝতে পারে, তাকে সংশোধন করার জন্য মাহফিলের আয়োজন করেছি, তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
-আপনি তাহলে কষ্ট করে, যে কোনওভাবেই হোক, আহলিয়াকে আমাদের হযরতের মাহফিলে আসুন। ইন শা আল্লাহ সমাধান হয়ে যাবে। রাব্বে কারীম দয়া করবেন।
১০: একবোনের কথা জানি। দ্বীনদার। দেখতে শুনতে হয়তো অতটা সুন্দর নন। স্বামী গরীব অবস্থায় (টাকার জন্য) তাকে বিয়ে করেছেন। এখন স্বামীর টাকা হয়েছে। স্ত্রীকে আর ভালো লাগে না। স্বামীর মন পাওয়ার জন্য, দ্বীনের সীমায় থেকে, এমন কিছু নেই, যা করেননি। তিনি আক্ষেপ করে তার বান্ধবীকে বলেছেন,
‘বিয়ের পর এতবছর কেটে গেল। এখনো চেহারা নিয়ে কথা শুনতে কার ভাল লাগে বল? চেহারাই কি সব? এতদিন একসাথে ঘর করার পরও, জীবনসঙ্গীর মনের সৌন্দর্য, স্বভাবের সৌন্দর্য যে আবিষ্কার ও উপভোগ করতে পারে না, তার সাথে ঘর করা যে কী কঠিন, ভুক্তভোগী ছাড়া বোঝানো যাবে না।
১১: দুনিয়াতেই জান্নাতি জীবন কাটতে চাইলে, রূপ নয়, গুণকে প্রাধান্য দেয়া জরুরী।

কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.