Header Ads

Header ADS

Life Experiance part 2



➤দিনলিপি-২⇘
(০৪-০৯-১৯)
তাকবীর: আল্লাহু আকবার!
তাকবীর: আল্লাহু আকবার!
-
১: আল্লাহ মহান। তরজমায় ‘সবচেয়ে’ হবে না; শুধুই মহান বা বড়। কারও তুলনায় বড় এমন নয়, কোনও তুলনা ছাড়াই আল্লাহ বড়।
২: ‘আল্লাহু আকবার’ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ। দুনিয়ার সবচেয়ে পিলে চমকানো বাক্য।
৩: পড়ছিলাম নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী-র গদ্যসমগ্র-৩। ফরিদপুরের এই কবির পদ্য পড়তে যেমনই লাগুক, গদ্য পড়তে বেশ লাগে। ফরিদপুরের আরেক কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখার পরিমাণ বিপুল হলেও, গদ্যটা অত টানে না। কিশোগঞ্জের নীরোদ সি চৌধুরীর গদ্য ঝাঁজালো; আগ্রহোদ্দীপক নয়। তবে হাঁ, দিনাজপুরের নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গদ্য বেশ ‘রমণীয়’। আর আমাদের নোয়াাখালির বুদ্ধদেব বসুর গদ্য তো লা-জওয়াব। সে যাক, বইয়ের প্রথম লেখা ‘আয়ুবের সঙ্গে’। পড়ছিলাম গভীর অভিনিবেশে।
৪: ‘আয়ুবের সঙ্গে’ লেখাটাকে ভ্রমণকাহিনী বলা যেতে পারে। পত্রিকার রিপোর্ট বলা যেতে পারে। নীরেন্দ্রনাথ বাংলাদেশে এসেছিলেন সাংবাদিক কোটায়। আইয়ুব খানের বাংলাদেশ সফর কাভার করতে।
৫: ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর, রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জাকে হটিয়ে, জেনারেল আইয়ুব খান (১৯০৭-১৯৭৪) পাকিস্তানের মসনদে আসীন হন। থিতু হয়ে বসার পর, জেনারেল আইয়ুব বাংলাদেশ সফরে আসেন। আইয়ুবের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, বাঙালকে তার সদ্য উদ্ভাবিত ‘বেসিক ডেমোক্রেসি’ (বুনিয়াদি গণতন্ত্র) বিষয়ে জ্ঞান দেয়া। বাংলাদেশকে চেনা-জানা। তখন আমন্ত্রণ জানানো হয় সারাবিশে^র বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার সাংবাদিকদের। বলাবাহুল্য আইয়ুব খানের শাসন করা দশকটাই পাকিস্তানের ইতিহাসে, সবচেয়ে ফলপ্রসূ সময়। বাংলাদেশের জন্যও। বাংলাদেশে বুয়েট থেকে শুরু করে, বড় বড় মিল-কারখানা, স্থাপনা এই জেনারেলই নির্মাণ করে দিয়ে যান। কাপ্তাই বিদ্যুত কেন্দের কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করার পেছনেও তার অবদান আছে। বাংলাদেশ সফরে আইয়ুব শত ব্যস্ততাতেও কাপ্তাই যেতে ভোলেননি। জন্মনিয়ন্ত্রণ অনুমোদন ও কাবিননামার সংশোধনের মতো ধর্মবিরোধী আইন জারির কুকীর্তিও তার ঝুলিতে আছে। পাশাপাশি, ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারেও তার বেশ আগ্রহ ছিল। আইয়ুব বিভিন্ন সময় কথাপ্রসঙ্গে একটা কথা বলতেন, ‘আমি সবার আগে মুসলমান, তারপর অন্য কিছু’। নবী ছাড়া কোনও মানুষই নিষ্পাপ নয়। দোষেগুণেই মানুষ। আইয়ুবেরও ভুলত্রুটি ছিল। থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে, আরও দশ-বিশজন পাক শাসকের ভীড়ে, আইয়ুব পাকিস্তানের ইতিহাসে অনন্য হয়ে থাকবেন।
৬: নীরেন্দ্রনাথমশায় ঢাকায় উঠেছেন শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। এই হোটেলটি চালু হয়েছে ১৯৬৬ সালে। ১৯৮৪ সালে এই হোটেল চলে যায় শেরাটন কোম্পানির অধীনে। ২০১১ সালে চুক্তিশেষে শেরাটন চলে যায়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ‘রূপসী বাংলা’ নামে চলতে থাকে। ২০১৪ সালে রূপসী বাংলা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সালে আবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল কোম্পানির অধীনে হোটেলটা যাত্রা শুরু করে। বলা হয়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আগ্রহেই, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কোম্পানীকে হোটেলটা দেয়া হয়। কারণ ওই একটাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই হোটেলের গুরুত্বভূমিকা ছিল।
৭: কবিমশায় বিমানবন্দর থেকে সোজা হোটেলে চলে এলেন। রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রেসিডেন্ট আসবেন দুপুর আড়াইটায়। হাতে সময় আছে। হোটেলের আরামদায়ক আবহে দু’চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসছে। কবিমশায় একচিমটি ঘুমিয়ে নেয়ার খাহেশ করলেন। কিন্তু বাদ সাধল,
‘বললুম তো ঘুমোব। কিন্তু ঘুমোয় কার সাধ্যি। আমাদের ঘরখানা একেবারে আয়ুব অ্যাভিনিউর উপরে। মুহুর্মূহু সেই পথের দিক থেকে চিৎকার উঠছে। বারান্দায় গিয়ে দেখি, সারি-সারি মানুষ চলেছে এয়ারপোর্টের দিকে। ছিন্নবস্ত্র শীর্ণকায় মানুষ। কিন্তু উৎসাহ তাদের অফুরন্ত। প্রত্যেকের হাতেই ছোট্ট একটি সবুজ পতাকা। মুখে স্লোগান...’
‘ফিল্ডমার্শাল আয়ু--ব...’
‘জিন্দাবাদ’
...
‘নারা-এর তকবি--র...’
‘আল্লা হু আকবর।’
বুকটা যেন ধড়াস করে উঠল। ঈশ^র মহান, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এমনই অদৃষ্ট যে, ঈশ্বরের মহিমাজ্ঞাপনে মুখর ওই ধ্বনি শুনে আজও মনে আতঙ্ক জেগে ওঠে।’
৮: এই হল ব্যাপার। তাকবীর ধ্বনি শুনে, যেখানে দুর্বল মুমিনের পিলে চমকে ওঠে, সেখানে ঈমানহীন একজন ভিনধর্মীর বুকটা ‘ধড়াস’ করে উঠবে না তো আনন্দে আপ্লুত হবে?
৯: একসাথে কয়েকভাষার বইপড়ার অভ্যেস বহুদিনের। কয়েকভাষা বলতে, বাংলা-আরবী-উর্দু-ইংরেজি। কখনোবা ফারসি। ফারসি খুব একটা পড়া হয় না। কদাচিৎ গুলিস্তাঁ-বোস্তাঁ আর আল্লামা রুমির মসনবী পড়া হয়। পটিয়ায় থাকতে নিয়মিত আল্লামা জামির ইউসুপ জোলায়খা, সিকান্দরনামা পড়া হত। দীওয়ানে হাফিয, আল্লামা ইকবারের ফার্সি বয়েতগুলো বোঝার চেষ্টা চলত। কিন্তু ঢাকায় আসার পর তালটা ঢিমে হয়ে গেছে। এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার জন্য একটা বুদ্ধি বের করেছিলাম। ওবায়েদ ভাইকে দিয়ে সৌদি থেকে কুরআন কারীমের ফার্সি তরজমা আনিয়েছিলাম। কুরআনের টানে হলেও ফারসিচর্চাটা ঝালাই হতে থাকবে; এই ছিল আশা। তা ফন্দিটা মন্দ হয়নি। চোখের সামনেই ফারসি কুরআন তরজমা জ¦লজ¦ল করে। মাঝেমধ্যে হাত টেনে কিতাবটা নামিয়ে চোখ বোলাই। অবাক হয়ে দেখি, ফারসি ভাষাটা বেশ ঝাপসা হয়ে এসেছে। চোয়াল চেপে বিড়বিড় করে বলি, নাহ, আলস্য ঝেড়ে ফেলতে হবে। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, মাকতুবাতে ইমাম রব্বানি মানে মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ.-এর চিঠিপত্রগুলো মূল ফারসিতে পড়ার। কয়েকবছর আগে তুরস্ক থেকে মাকতুবাতের আরবী তরজমা আনিয়েছিলাম। শেষ করিনি। ফারসিতে পড়ব বলে। ইন শা আল্লাহ।
১০: নীরেনবাবুর আতঙ্ক দেখে এখন পড়তে থাকা অন্য দু’টি বইয়ে মন ছুটে গেল। নীরেনবাবুর গদ্যসমগ্রের সাথে পড়ছি,
১: খামসু দাক্কায়েক ওয়া হাসব। লেখিকা, হিবা দাব্বাগ। এ-বইয়ের ইংরেজি হয়েছে। জাস্ট ফাইভ মিনিট। কালান্তর থেকে বাংলাও হয়েছে। নব্বুইয়ের দশকে, গোটা সিরিয়া জুড়ে হাফেয আল আসাদ নির্যাতনের যে স্টীমরোলার চালিয়েছিলেন, তার প্রত্যক্ষদর্শীর জীবন্ত বর্ণনা।
২: তাদমুর: শাহিদ ওয়া মাশহুদ। লেখক মুহাম্মাদ সালিম হাম্মাদ। ইংরেজি অনুবাদের নাম, তাদমুর এ উইটনেস এন্ড এ উইটনেসড।
দ্বিতীয় বইটাও নব্বুইয়ের দশকে পিতা আসাদের কুখ্যাত তাদমুর কারাগারে বন্দী থাকার দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে। এই বইটার আরবী দারুন। বক্তব্যের প্রকাশভঙ্গিটা কুরআনঘেঁষা। লেখক লেখার ফাঁকে ফাঁকে কুরআনি ‘বাক্য’ জুতে দিয়েছেন। এ-ধরনের আরবী পড়তে কী যে ভাল লাগে।
১১: এই নীরেনবাবুকে ধড়াসে বুকের সাথে এই দুই বইয়ের কী যোগসূত্র কী? তাদমুর মানে ঐতিহ্যবাহী পালমিরা শহর। এই শহরেও তাকবীর ধ্বনি শুনে বুকটা ধড়-ধড়াস করে ওঠার ঘটনা ঘটেছে। পালমিরা পৃথিবীর প্রাচীন শহরগুলোর একটি। পুরো শহরজুড়ে প্রাচীন স্থাপত্যনিদর্শনে ভরপুর। ইউনেস্কো এই শহরকে ঐতিহ্যবাহী শহরের অন্তর্ভুক্ত করেছে। সিরিয়ার মাঝামাঝিতে হিমস অঞ্চলে অবস্থিত। রাজধানি দামেশক থেকে ২৪৩ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ মিটার উপরে। চারপাশ মরুভূমিবেষ্টিত এই শহরকে, চীন থেকে রোম পর্যন্ত বিস্তৃত প্রাচীন সিল্করুটও ছুঁয়ে গেছে। এজন্য তাদমুরকে মরুর কনে বা মরুর মুক্তো বলা হয়। সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই তাদমুরে বাণিজ্যকাফেলা কিছুক্ষণ এসে জিরোত।
১২: তিনহাজারেরও বেশি বছর বয়েসী তাদমুরকে নিয়ে কিছুদিন বেশ টানাহ্যাঁচড়া গেছে। তাদমুর এখন বাশার আসাদের দখলে থাকলেও শামে মুবারক জিহাদ শুরু হওয়ার পর এই শহরের নিয়ন্ত্রণ চারবার হাতবদল হয়েছে,
ক: ২০ মে ২০১৫-তে দাওলা ইসলামিয়্যাহ (ইসলামিক স্টেট) তাদমুর দখল করেছিল।
খ: ২০১৬ সালের মার্চে রাশানরা সিরিয়ান সেনাদের সাথে মিলে তাদমুর পুনর্দখল করে। পুতিন বিজয় উদযাপন করতে গিয়ে, আনন্দের আতিশয্যে, রীতিমতো মস্কো থেকে সিম্পনি আর অপেরা দল এনে, ডাকঢোল পিটিয়ে বিরাট সংগীতসন্ধ্যার আয়োজন করেছিল।
গ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬-তে রাশা-বাশারকে তুমুলভাবে হটিয়ে আইএস আবার তাদমুর দখল করে।
১৩: তাকবীরধ্বনির প্রচ- ধাক্কায়, নীরেনবাবুর দমচাপা আতঙ্কের সূত্রে, মনে পড়ল তৃতীয়বার তাদমুর দখলের সময়কার একটি দৃশ্য। রাশান বাহিনীর মুল সমাবেশ লাটকিয়াতে। তাদমুর দখল করার পর, পুতিন বিপুল পরিমাণ রাশান সৈন্য এখানে মোতায়েন রেখেছিল। মুজাহিদবাহিনী যখন সাঁড়াশি আক্রমণ করে আকাশ-বাতাস ফাটিয়ে তাকবীরধ্বনি দিতে শুরু করল, দেখা গেল যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র ফেলে, রাশা-বাশাররা পিলপিল করে ঘাঁটি ছেড়ে পালাতে শুরু করল। সে এক দেখার মতো দৃশ্য।
১৪: গর্ত থেকে পিঁপড়া বের হয় না, ঠিক সেভাবে বাংকার থেকে একের এক রাশান সেনা বের হচ্ছে তো হচ্ছেই। তাকবীরধ্বনির কী যে শক্তি, কাফেরের শত বছরের সঞ্চিত সাহস-শক্তিও এক তাকবীরে হাপিস হয়ে যেতে পারে। মুজাহিদের তাকবীরধ্বনিতে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলার ঘটনা, একটা দুইটা নয়, অসংখ্য। ইসরায়েলে অহরহ প্যান্ট ভেজানোর ঘটনা ঘটে। মুজাহিদবাহিনী শুধু একটা জায়গায় কাফেরদের কাছে মার খেয়ে যায়, সেটা হল ‘বিমান’। এ জিনসটার সামনে আল্লাহর রাহের রাহীরা অপারগ হয়ে পড়ে। এটা বোধ হয় আল্লাহরই ফয়সালা।
১৫: তাকবীর ধ্বনির গল্প কি শুধু বিদেশে? না, আমাদের দেশেও আছে। কথিত আছে, শাহ জালাল রহ. সিলেটের অত্যাচারী রাজা, গৌর গোবিন্দের প্রাসাদের সামনে তাকবীর দিলে, রাজার সাতমহলা প্রাসাদও হুড়মুড় করে গুঁড়িয়ে পড়েছিল। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘটনা তো একেবারে চাক্ষুষ। বেচারা বক্তব্য দিচ্ছিল। উপস্থিত এক বেরসিক মুসলিম শ্রোতা হঠাৎ তাকবীর দিয়ে উঠল। আর যায় কোথায়, ট্রাম্প একেবারে লাফ দিয়ে পালাতে উদ্যত হল। এছাড়া কতবার দেখেছি, ভিনধর্মীরা কী সব হাঁকডাক আর আড়ম্বর-সাড়ম্বরে মিছিল-শোভাযাত্রা নিয়ে যাচ্ছে। দুষ্টছেলের দল, এমনি এমনি আড়াল থেকে, পিলে চমকানো আওয়াজে, আচানক তাকবীর দিয়ে উঠল। সাথে সাথে যেন মৌচাকে ঢিল পড়ল। মিছিল ভেঙ্গে পালানোর সে কি দুদ্দাড় প্রতিযোগিতা! কে কার আগে পালাবে, কে কোনদিকে লুকোবে, মাছ মারামারি কাণ্ড।
.
তাকবীইইর..........!!!

কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.