Header Ads

Header ADS

হাসি কম,কাঁদি বেশি 2 (Life Changing History)

হাসি কম,কাঁদি বেশি: 2
ধূলোমলিন তালাক!


চট করে মাথায় রাগ উঠে যায়। এমন রগচটা হলে সংসার করা মুশকিল। স্ত্রী অনেকবারই একথা বলেছে। কে শোনে কার কথা! ঝগড়া শুরু করলে স্বামীর মুখের হাতের লাগাম থাকে না বললেই চলে। একদিন রাগের মাথায় বেসামাল মুহূর্তে বেফাঁস তালাক দিয়ে বলল,
‘ اليوم المشؤوم الاغبر الذي ليس به نور ’
তুমি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাও। একমাত্র ‘অশুভ ধূলোমলিন আলোহীন’ দিনেই তুমি চাইলে আমার ঘরে ফিরতে পারবে’
.
স্ত্রীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। গুমরে কাঁদতে কাঁদতে বাপের বাড়ি চলে এল। স্ত্রী বেরিয়ে যেতেই রাগত স্বামীর ‘টং’ মাথার ‘জং’ নেমে গেল। হায় হায় করলাম কী? সব শেষ করে দিয়েছি। এখন উপায়? মনের দুঃখে স্বামী খাওয়া-নাওয়া শিকেয় উঠল। মুখে হাত দিয়ে ভাবনায় ডুবে গেল। কোনও কূলকিনারা করে উঠতে পারল না। দৌড়ে মসজিদে গেল। ইমাম সাহেবের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। সব শুনে ইমাম পড়লেন জটিল সমস্যায়,
-আমি কোত্থেকে তোমার জন্য এমন ‘দিন’ খুঁজে আনব। তালাক দিয়েছ, এবার ঠ্যালা সামলাও। আবার এমন দিনে ফিরিয়ে আনার শর্ত দিয়েছ, যার কোনও অস্তিত্বই নেই।
.
জালিম স্বামী নতমুখে ঘরে ফিরে শুয়ে আকাশপাতাল ভাবতে লাগল। কী করি? ভোর হলেই শহরে যেতে হবে। সেখানে বড় কোনও আলিমের কাছে হয়তো সমাধান থাকতে পারে। উফ! কী পাষণ্ড আমি, এমন হুরপরীর মতো ফিরিশতাতুল্য বউকে কেউ তালাক দেয়? কী জানোয়ার আমি! সারারাত এপাশ ওপাশ করে কেটে গেল। শেষরাতের দিকে চোখের পাতা ভারী হয়ে এর। দু’চোখে নেমে এল রাজ্যের ঘুম। পাখির ডাকে সম্বিত ফিরল। হায় হায়, ফজর কাযা হয়ে গেছে। কী হতভাগা আমি! এমন কষ্টের দিনেও কেউ ফজর বাদ দেয়?
.
যা হোক, ব্যাগ গুছিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে এল। পাশের ঘরে বিছানায় পড়ে থাকা বৃদ্ধা মায়ের কথা মনেও রইল না। পাশের গ্রামে এক বড় আলেম আছেন। তার কাছে ফতোয়া চাওয়া হল। শোনার সাথে সাথেই বলে দিলেন, এমন দিন কেয়ামতের আগেও আসবে না। সুতরাং বিবিকে ফিরিয়ে আনার আশা ছেড়ে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
.
রগচটা স্বামী হাঁটতে হাঁটতে শহরে পৌঁছল। ক্লান্তিতে শরীর নুয়ে আসছে। তবুও বসতে ইচ্ছে হল না। একটা কিছু সমাধান না পেলে, এই জীবনে বেঁচে থাকার আশাই ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে। একটু জিরিয়ে নেয়ার আশায় দোকানের ছায়ায় বসল। রোদও পড়ছে ছাতিফাটা। আগন্তুকের মলিন চেহারা দেখে দোকানদারের বোধহয় মায়া হয়। আগবাড়িয়ে জানতে চাইল,
-কী মুসাফির! কোনও সমস্যা?
স্বামী সমস্যার কথা বলল। একজন অভিজ্ঞ আলিম দরকার। এই জটিল মাসয়ালার সমাধান যে সে দিতে পারবে না। দোকানদার বলল,
-শহরের শেষপ্রান্তে একজন দরবেশ থাকে। তার কাছে গিয়ে দেখতে পারো। এলেম-কালাম ভালোই আছে দরবেশ সাহেবের। তার গরীব বেশভূষা দেখে হতাশ হয়ো না।
.
স্বামী আশা ভরা পায়ে দরবেশের কাছে গেল। ঘটনা শুনে দরবেশ চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর স্বামী উশখুশ করতে লাগল। দরবেশ রাগত স্বরে বললেন,
-এমন গুণবতী বিবিকে যে সম্মান করতে জানে না, তার কাছে বিবিয়ে ফিরিয়ে আনার সমাধান দেয়াটা গুনাহের কাজ হবে। তোমার মতো জালিমের শাস্তি হওয়া দরকার। তারপরও যেহেতু তুমি অনুতপ্ত হয়েছ, শেষবারের মতো একটা সুযোগ দেয়া যেতে পারে। কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও
-আজ ফজরের নামায পড়েছ?
-জি¦ না। উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছিল।
-যা প্রশ্ন করি, শুধু তার উত্তর দেবে। অতিরিক্ত কথা বলবে না। সাফাই গাইবে না। আজ মায়ের সেবা করেছ?
-জি¦ না। কারণ...
-চোওওপপপ! কারণ দর্শাতে নিষেধ করেছি না। আজ কুরআন তিলাওয়াত করেছ?
-জি¦ না। মানে
-আবার....! শোন বদবখত জালিম, আজ সুয্যি ডোবার আগে আগে, দৌড়ে গিয়ে বিবিকে রুজু করে নে।
-দরবেশবাবা, কী করে সম্ভব হল?
-শোন খবীস! আজ ফজর পড়লি না। মায়ের সেবা করাতো দূরের কথা, বৃদ্ধমায়ের মুখও দর্শন করলি না। গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে এলি, মায়ের অনুমতিটুকু নেয়ার প্রয়োজন মনে করলি না। মুসলিম হয়েও আল্লাহর পাক কালাম হাতে নিয়ে দেখলি না। এর চেয়ে অশুভ আর আলোনূরহীন দিন হতে পারে?
.
বিকেল হতে আর বেশি বাকী নেই।
স্বামী পড়িমরি করে দৌড় দিল।

ওয়া উম্মাতাহ!
মা-মণি, ঘুমিয়ে থাকো!
জান্নাতে পাখি হয়ে উড়তে থাকো!
শামের এই মা-মণিটির মতোই অসংখ্য মুসলিম প্রতিনিয়ত অসহায়ভাবে শহীদ হয়ে চলেছে। অবস্থা, পরিবেশ, পরিস্থিতি আমাদের হাত-পা এমনভাবে বেঁধে রেখেছে, একটু ‘নড়াচড়া’ করলেই হয় জেলে যেতে হচ্ছে, নইলে গুম হয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু উম্মাহর এই অসহায় অবস্থা থাকবে না। ইন শা আল্লাহ পরিবর্তন আসবেই। উম্মাহ যতই ঘুমিয়ে থাকুক, আল্লাহর কিছু বান্দা সবসময়, কোথাও না কোথাও, জেগে থাকেই।
Image may contain: 1 person

মুয়াজ্জিন আযান দেয়, ঘড়ি আযান দেয়, রেডিও-টিভি আযান দেয়, তারপরও নামাজে হাজির হতে দেরি হয়ে যায়। কলব আযান না দেয়া পর্যন্ত, নামাযে অবহেলা থাকবেই।

কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.