Islamic stories-ইসলামিক গল্প (part 4)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
গল্পে গল্পে জীবন
(দোস্তহুজুর)
(part 4)
বাবা-মায়ের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে ভাই খুব সুন্দর বয়ান করেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের জন্য একরকম বয়ান। তার খাস ছাত্রদের জন্য আরেকরকম বয়ান। ভাই বলেন,
حق الوالدين حيا
عظمت ، محبت، خدمة ، إطاعة، رفع حاجة، فكر راحة، زيارة.
মা-বাবা জীবিত থাকলে, সন্তানের উপর সাতটা কর্তব্য,
১: আযমত। মা-বাবার প্রতি আন্তরিক সম্মান পোষণ করবে।
২: মা-বাবাকে দিল থেকে মহব্বত করবে।
৩: মনপ্রাণ উজাড় করে মা-বাবার খেদমত করবে।
৪: দ্বীনের সীমায় থেকে মা-বাবার সর্বোচ্চ আনুগত্য করবে।
৫: নিজের সামর্থ অনুযায়ী মা-বাবার প্রয়োজন পুরো করবে।
৬: নিজের আরামের চেয়ে মা-বাবার আরামের ফিকির বেশি করবে।
৭: নিয়মিত মা-বাবার খোঁজ-খবর রাখবে। দূরে থাকলে, তাদেরকে নিয়মিত দেখতে আসবে।
.
بعد الموت:
الدعاء لمغفرتهما، إيصال ثواب، تأدية أمانتهما، تنفيذ وصاياهما، إطاعة أحابابهما وأقاربها، إكرام أحبابهما وأقاربهما، زيارة قبرهما.
মা-বাবার ইন্তেকালের পর সন্তানের উপর সাতটি কর্তব্য,
১: তাদের মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করা।
২: মা-বাবার জন্য ঈসালে সওয়াব করা। দান-সাদাকার মাধ্যমে তাদের আমলনামায় সওয়াব পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা।
৩: মা-বাবার কাছে অন্য কারও আমানত থাকলে, সেটা প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেয়া।
৪: মা-বাবা কোনও ওসীয়ত করে গেলে, সেটা পূরো করা।
৫: শরীয়তের সীমায় থেকে, মা-বাবার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের আনুগত্য করা।
৬: মা-বাবার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের যথাযথ ইকরাম করা। সম্মান করা।
৭: মা-বাবার কবর যেয়ারত করা।
.
ভাই বলেন,
-মা-বাবা জীবিত থাকাবস্থাও সাতটা কর্তব্য পালন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তাদের ইন্তেকালের পরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। কতটুকু কী করতে পারছি, আল্লাহই ভালো জানেন। মা-বাবার মতো দুনিয়াতে সন্তানের আপন আর কে আছে?
كاسائي مادر، كيسائي فدر، كوشش فسر
সন্তান বেড়ে ওঠার তিনটি মৌলিক উপাদান,
ক: মায়ের আঁচল। আদর-যত্ন।
খ: বাবার (টাকার থলে)। তত্ত্বাবধান।
গ: সন্তানের প্রচেষ্টা। সংগ্রাম।
সন্তান ভাল হবে কি মন্দ হবে, সেটা অনেকটা নির্ভর করে মা-বাবার উপর।
خِشتِ أول صو نهد مِعمار كج
تاثريا مي روَد ديوار كج
মিস্ত্রি ভবনের প্রথম ইটটা বাঁকা রাখলে,
প্রাসাদ যতই গগনচুম্বীই হোক, বাঁকাই থাকে।
.
গ্রামের মাদরাসাগুলোতে কিছু দূরের তালিবে ইলম পড়তে আসে। অনেক দূরের। তাদের কেউ বছরে একবার বাড়ি যায়। কেউ পড়ালেখা শেষ করে যায়। কারো পিছুটান থাকে, কারও থাকে না। সবার একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল, তারা ছুটিছাটায় বাড়ি যায় না। তারা মাদরাসার সবকাজে সবার আগে থাকে। বড়ভাই খুঁজে খুঁজে এমন তালিবে ইলমদেরকে তাঁর বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে আসেন। কখনো মাসে একবার। কখনো বড় ছুটিতে। আবার কখনো বাড়ি থেকে ‘ভালাবুড়া’ কিছু রান্না করে আনেন। ছেলেগুলো এত খুশি হয়, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
.
ভাবীসাহেবা এই ছাত্রদের জন্য প্রতি সপ্তাহে মাছ ধরেন। জিয়ল মাছ, কই, পুঁটি, খলসে ইত্যাদি। বড়ভাই যাওয়ার শনিবারে মাদরাসায় যাওয়ার সময় কলাপাতায় মুড়িয়ে ভাজা মাছগুলো দিয়ে দেন। ছাত্ররা মাদরাসার ওজু জায়েজ হওয়ার মতো পিনপিনে টলটলে ‘পাতলা’ ডালের সাথে ‘খোলাপোড়া’ কড়কড়ে মাছগুলো দিয়ে অমৃতভোজনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভাবীর জন্য ছাত্ররা কীভাবে যে দু‘আ করে! তারা তাদের না-দেখা মায়ের জন্য পারলে জান দিয়ে দিতে পারবে। মানুষ তো আসলে অনুগ্রহের দাস। মানুষ ভালোবাসার কাঙাল।
.
বাটিতে করে দু’জনের খাবার আসে। মাঝেমধ্যে ভাত-তরকারি বেঁচে যায়। ভাই একটা হাঁড়িতে ভাতগুলো জামিয়ে রাখেন। বাজার থেকে প্লাস্টিকের থলে কিনে এনে রাখেন। এশার পর বা কখনো তাহাজ্জুদের সময়, নির্দিষ্ট ঘরের দরজায় পান্তাভাত ঝুলিয়ে রেখে আসেন। ঘরনিরা জানে, ভাতগুলো কোথা থেকে আসে। কীভাবে আসে। হাশিমদের বাড়িতেও মাঝেমধ্যে ভাত রেখে আসেন। অন্য কারও সাহায্য না নিলেও, ভাইয়ের রেখে আসা ভাত গ্রহণ করতে, তারা আপত্তি করে না। মুয়াজ্জিন সাহেবের বাড়ি কাছেই। প্রায়ই তিনি রাতে বাড়ি চলে যান। রাতের খাবার না খেয়েই। কখনো সকালের ভাতও খান না। ভাই তখন ফজরের পর, হাশেমকে সাথে নিয়ে আসেন। জায়গীর বাড়ি থেকে সকালের নাস্তা আসা পর্যন্ত তাকে পড়াতে থাকেন। সময় হলে, দু’জনে নাস্তা করে, বাকি থাকা খাবার দিয়ে দেন। বোনকে খেতে দিবে। নইলে প্রায়ই বোনকে না খেয়ে মাদরাসায় যেতে হয়। মাদরাসার বড় আপা তার অবস্থা জানেন। চেহারা দেখেই বুঝতে পারেন, মেয়েটা না খেয়েই মাদরাসায় এসেছে। গ্রামের গরীব মাদরাসা। অতিরিক্ত খাবার থাকে না বললেই চলে। তারপরও বড়আপা চেষ্টা করেন মেয়েটাকে কিছু খেতে দিতে।
.
বাড়িতে ভাবীর নিজের প্রতিষ্ঠা একটি মেয়েদের মাদরাসা আছে। ভাই একটা কাজ করেছেন, হাশেমের মাকে বলেকয়ে, মেয়েটাকে ভাবীর মাদরাসায় নিয়ে এসেছেন। মেয়েটা মেধাবী। তাকে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়া দরকার। ভাবীর মাদরাসায় প্রচ- টানাটানি। তবুও কোনও ছাত্রী এলে তিনি টাকার জন্য কাউকে ফিরিয়ে দেন না। যে যার রিযিক নিয়েই দুনিয়াতে এসেছে। আমার দায়িত্ব লেখাপড়ার দিকটা দেখা। রিযিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় আমি অহেতুক নাক গলাতে যাবো কেন?
.
ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া প্রতি ভাবীর বেজায় আগ্রহ। বিয়ের আগে তেমন পড়ার সুযোগ পাননি। বিয়ের পর ভাইয়ের কাছেই পড়া শুরু করেন। প্রথম দিকে ভাই প্রতি সপ্তাহে বাড়ি যেতে পারতেন না। ছুটি পেতেন না। ভাড়াও থাকত না। তারপরও বাড়ি গেলে, ‘দাম্পত্যজীবনের’ পাশাপাশি, ভাবীকে কিছু কিছু পড়তে সাহায্য করতেন। মোবাইল আসা পর্যন্ত এভাবেই গুটি গুটি করে লেখাপড়া করেছেন। মোবাইলের প্রসার ঘটার পর ভাবী ঘরে পড়তেন। কোথাও আটকে গেলে মোবাইলে সমাধান জেনে নিতেন।
.
মোবাইলের আরেকটু প্রসার হলে, ভাই যখন দরসে পড়াতেন, মোবাইলে কল দিয়ে রাখতেন। ওদিকে ভাবীও পড়া ধরতেন। যা তা ধরা নয়, অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে, গভীর অভিনিবেশের সাথে দরসের তকরীর (লেকচার) শুনতেন। কোথাও অস্পষ্ট থাকলে, পরে বুঝে নিতেন। এজন্য মোবাইলে অনেক টাকা বিল আসত। ভাবী মোবাইল খরচ তোলার জন্য রাতদিন পরিশ্রম করতেন। এটাসেটা বানিয়ে বিক্রি করতেন। পাটি বুনতেন। হাতে আরও নানাকিছু বানাতেন। চেষ্টা করলে, আল্লাহ তা‘আলা একটা না একটা উপায় বের করেই দেন।
.
ভাবী শুধু মোবাইলে পড়া শুনেই ক্ষান্ত হতেন তা নয়। পড়া ইয়াদ করতেন। ভাই বাড়িতে গেলে পড়া শোনাতেন। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হল, মাদরাসায় পরীক্ষা হলে, ঐ বিষয়ের একটা প্রশ্ন বাড়িতে আনাতেন। ভাইয়ার উপস্থিতিতে নিজে নিজে পরীক্ষায় বসতেন। লেখা শেষ হলে খাতা জমা দিতেন ভাইয়ের কাছে। অনেক সময় দেখা যেত মাদরাসার ‘নাম্বারে আউয়াল’ তালিবে ইলমের চেয়েও ভাবী ভালো লিখেছেন।
.
ভাবি একই কিতাব কয়েকবার করে পড়তেন। দ্বিতীয় বছর ভাইকে বলতেন, মাদরাসার প্রশ্নের পাশাপাশি তার জন্য আরও কঠিন করে, আলাদা প্রশ্নপত্র তৈরি করে দিতে। ভাইও যতটা কঠিন করা সম্ভব, করতেন। ভাবী অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সেই পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়ে যেতেন। একবার কোনও পরীক্ষা খারাপ হলে, দ্বিতীয়বার দিতেন। তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চমবারও পরীক্ষা দিয়েছেন কোনও কোনও বিষয়ে। বিস্ময়কর অধ্যবসায়।
.
নিজে পড়েই ক্ষান্ত হয়েছেন? জি¦ না। বাড়ির মেয়ে-মহিলাদেরও পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার একনাগাড়ে লেগে থাকার কারণে, চক্ষুলজ্জার খাতিরে হোক বা ইলমপিপাসু হয়েই হোক, অনেকেই পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ভাবীর একক প্রচেষ্টাতেই ভাইয়ের বাড়িতে আজ একটি মহিলা মাদরাসা গড়ে উঠেছে।
.
ভাবীর মাদরাসার মেয়েদের জন্য মায়েদের মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। ভাবীর নিজের তিন মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় বড় আলিমগন তাদের সন্তানের জন্য, বলতে গেলে, ভাইয়ের পায়ের উপর পড়া বাকি রাখেন। তারা ভাইয়ের মেয়েকে পুত্রবধূ করতে চান। ভাই এসব বিষয়ে নির্বিকার থাকেন। তার এককথা, আমার বিষয়বুদ্ধি কম। যেখানে দ্বীন, সেখানে আমি। আলিম বড় না ছোট, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। পাত্র যদি ইলমদার হওয়ার পাশাপাশি আমলদার হয়, তাহলে অত তদ্বির করতে হবে না, আমি এমনিই মেয়ে দিয়ে দেব।
.
ছোট মেয়েটা শরহে বেকায়া জামাতে পড়ে। মেয়েটা বড় বেশি ভাল। হুবহু তার মায়ের মতো হয়েছে। ভাই বলেন, আমার ছোট মা’টার পড়ালেখার বেজায় শখ। কিন্তু বিয়ের প্রস্তাবের জ¦ালায় মোবাইল রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। একজন মুরুব্বী তার ছেলের জন্য আমাকে রাজি করাতে না পেরে, আমার শায়খের কাছে পর্যন্ত গিয়েছে। শায়খ চমৎকার উত্তর দিয়েছেন,
‘যার মেয়ে সে বুঝবে, আমি কেন একজন বাবার উপর জোর খাটাতে যাবো’?
.
ভাবীর শিক্ষানীতি খুবই পরিস্কার। মেয়েরা প্রথমে এসে কুরআন হিফয করতে লেগে যায়। ফাঁকে ফাঁকে অল্প অল্প আরবী শেখে। বিকেলে অল্পস্বল্প বাংলা-ইংরেজি-উর্দু পড়তে লিখতে শেখে। ছোটখাট উর্দু কিতাব পড়তে থাকে। হাদীস মুখস্থ করতে থাকে। মূল মনোযোগ থাকে হিফযে। হিফয শেষ হতে হতে ভাষাশিক্ষার মৌলিক যোগ্যতা হয়ে যায়। উম্মুল মুমিনীনগনের জীবনী ভাল করে জানা হয়ে যায়। নবীজির সীরাত পড়া হয়ে যায়। রাহে নাজাত, তালীমুল ইসলাম, বেহেশতী জেওর ভাল করে পড়া হয়ে যায়। পাশাপাশি ইসলামের ইতিহাস, অল্পসল্প অংকের জ্ঞানও হয়। ভাবীর হাতের লেখা একেবারে মুক্তোর মতো। মেয়েদের লেখাগুলোও হয় দেখা মতো। লু‘লুউম মাকনূন। সুরক্ষিত মুক্তোসদৃস।
.
ভাবী চান, তার কাছে মেয়েরা দ্বীন ও জীবনের মৌলিক পাঠটুকু গ্রহণ করুক। প্রচলিত জামাতভিত্তিক পড়াশোনাতে তার আগ্রহ নেই। কারও আগ্রহ থাকলে তার কাছে পড়াশোনা শেষ করে, অন্য কোথাও পড়তে পারে। সে ব্যাপারে ভাবীর আপত্তি নেই। যারা পড়ালেখায় ভাল, তাদেরকে তিনি আরও পড়াশোনার উৎসাহও দিয়ে থাকেন। তবে সবার আগে তিনি প্রতিটি মেয়েকে প্রথমে একজন আদর্শ গুণবতী স্ত্রী তারপর ‘অনুকরণীয়’ মা হতে উদ্বুদ্ধ করেন। বেশি বেশি কুরআন, হাদীস আর সীরাত পড়তে উৎসাহ দেন। বুঝে বুঝে পড়তে বলেন। আমলের নিয়তে পড়তে অভ্যস্ত করে তোলার প্রয়াস চালান।
.
মাদরাসার মেয়েদের নিয়ে ভাবীর আলাদা সংসার। এই সংসার নিয়েই তাঁর চব্বিশ ঘণ্টা কাটে। মেয়ের মতো। সত্যি বলতে কি, মতো নয়, হুবহু মেয়ের মতোই তাদের আদর-যতœ করেন। দেখাশোনা করেন। ভাবী চেষ্টা করেন, একটা মেয়ে যেন মৌলিক যোগ্যতাগুলো অর্জন করতে পারে। মেয়েটার মধ্যে যেন দ্বীন ‘সহীহ ফাহম’ সঠিক বুঝ গড়ে ওঠে। মেয়েটা যেন দ্বীনকে অন্তর থেকে মানতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। মন থেকেই যেন একটা ‘পর্দা’ করে। কোনও পরিস্থিতিতেই যেন দ্বীনের ব্যাপারে আপোষ না করে ফেলে।
(please visit our website for part 5)
(part 4)
বাবা-মায়ের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে ভাই খুব সুন্দর বয়ান করেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের জন্য একরকম বয়ান। তার খাস ছাত্রদের জন্য আরেকরকম বয়ান। ভাই বলেন,
حق الوالدين حيا
عظمت ، محبت، خدمة ، إطاعة، رفع حاجة، فكر راحة، زيارة.
মা-বাবা জীবিত থাকলে, সন্তানের উপর সাতটা কর্তব্য,
১: আযমত। মা-বাবার প্রতি আন্তরিক সম্মান পোষণ করবে।
২: মা-বাবাকে দিল থেকে মহব্বত করবে।
৩: মনপ্রাণ উজাড় করে মা-বাবার খেদমত করবে।
৪: দ্বীনের সীমায় থেকে মা-বাবার সর্বোচ্চ আনুগত্য করবে।
৫: নিজের সামর্থ অনুযায়ী মা-বাবার প্রয়োজন পুরো করবে।
৬: নিজের আরামের চেয়ে মা-বাবার আরামের ফিকির বেশি করবে।
৭: নিয়মিত মা-বাবার খোঁজ-খবর রাখবে। দূরে থাকলে, তাদেরকে নিয়মিত দেখতে আসবে।
.
بعد الموت:
الدعاء لمغفرتهما، إيصال ثواب، تأدية أمانتهما، تنفيذ وصاياهما، إطاعة أحابابهما وأقاربها، إكرام أحبابهما وأقاربهما، زيارة قبرهما.
মা-বাবার ইন্তেকালের পর সন্তানের উপর সাতটি কর্তব্য,
১: তাদের মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করা।
২: মা-বাবার জন্য ঈসালে সওয়াব করা। দান-সাদাকার মাধ্যমে তাদের আমলনামায় সওয়াব পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা।
৩: মা-বাবার কাছে অন্য কারও আমানত থাকলে, সেটা প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেয়া।
৪: মা-বাবা কোনও ওসীয়ত করে গেলে, সেটা পূরো করা।
৫: শরীয়তের সীমায় থেকে, মা-বাবার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের আনুগত্য করা।
৬: মা-বাবার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের যথাযথ ইকরাম করা। সম্মান করা।
৭: মা-বাবার কবর যেয়ারত করা।
.
ভাই বলেন,
-মা-বাবা জীবিত থাকাবস্থাও সাতটা কর্তব্য পালন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তাদের ইন্তেকালের পরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। কতটুকু কী করতে পারছি, আল্লাহই ভালো জানেন। মা-বাবার মতো দুনিয়াতে সন্তানের আপন আর কে আছে?
كاسائي مادر، كيسائي فدر، كوشش فسر
সন্তান বেড়ে ওঠার তিনটি মৌলিক উপাদান,
ক: মায়ের আঁচল। আদর-যত্ন।
খ: বাবার (টাকার থলে)। তত্ত্বাবধান।
গ: সন্তানের প্রচেষ্টা। সংগ্রাম।
সন্তান ভাল হবে কি মন্দ হবে, সেটা অনেকটা নির্ভর করে মা-বাবার উপর।
خِشتِ أول صو نهد مِعمار كج
تاثريا مي روَد ديوار كج
মিস্ত্রি ভবনের প্রথম ইটটা বাঁকা রাখলে,
প্রাসাদ যতই গগনচুম্বীই হোক, বাঁকাই থাকে।
.
গ্রামের মাদরাসাগুলোতে কিছু দূরের তালিবে ইলম পড়তে আসে। অনেক দূরের। তাদের কেউ বছরে একবার বাড়ি যায়। কেউ পড়ালেখা শেষ করে যায়। কারো পিছুটান থাকে, কারও থাকে না। সবার একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল, তারা ছুটিছাটায় বাড়ি যায় না। তারা মাদরাসার সবকাজে সবার আগে থাকে। বড়ভাই খুঁজে খুঁজে এমন তালিবে ইলমদেরকে তাঁর বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে আসেন। কখনো মাসে একবার। কখনো বড় ছুটিতে। আবার কখনো বাড়ি থেকে ‘ভালাবুড়া’ কিছু রান্না করে আনেন। ছেলেগুলো এত খুশি হয়, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
.
ভাবীসাহেবা এই ছাত্রদের জন্য প্রতি সপ্তাহে মাছ ধরেন। জিয়ল মাছ, কই, পুঁটি, খলসে ইত্যাদি। বড়ভাই যাওয়ার শনিবারে মাদরাসায় যাওয়ার সময় কলাপাতায় মুড়িয়ে ভাজা মাছগুলো দিয়ে দেন। ছাত্ররা মাদরাসার ওজু জায়েজ হওয়ার মতো পিনপিনে টলটলে ‘পাতলা’ ডালের সাথে ‘খোলাপোড়া’ কড়কড়ে মাছগুলো দিয়ে অমৃতভোজনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভাবীর জন্য ছাত্ররা কীভাবে যে দু‘আ করে! তারা তাদের না-দেখা মায়ের জন্য পারলে জান দিয়ে দিতে পারবে। মানুষ তো আসলে অনুগ্রহের দাস। মানুষ ভালোবাসার কাঙাল।
.
বাটিতে করে দু’জনের খাবার আসে। মাঝেমধ্যে ভাত-তরকারি বেঁচে যায়। ভাই একটা হাঁড়িতে ভাতগুলো জামিয়ে রাখেন। বাজার থেকে প্লাস্টিকের থলে কিনে এনে রাখেন। এশার পর বা কখনো তাহাজ্জুদের সময়, নির্দিষ্ট ঘরের দরজায় পান্তাভাত ঝুলিয়ে রেখে আসেন। ঘরনিরা জানে, ভাতগুলো কোথা থেকে আসে। কীভাবে আসে। হাশিমদের বাড়িতেও মাঝেমধ্যে ভাত রেখে আসেন। অন্য কারও সাহায্য না নিলেও, ভাইয়ের রেখে আসা ভাত গ্রহণ করতে, তারা আপত্তি করে না। মুয়াজ্জিন সাহেবের বাড়ি কাছেই। প্রায়ই তিনি রাতে বাড়ি চলে যান। রাতের খাবার না খেয়েই। কখনো সকালের ভাতও খান না। ভাই তখন ফজরের পর, হাশেমকে সাথে নিয়ে আসেন। জায়গীর বাড়ি থেকে সকালের নাস্তা আসা পর্যন্ত তাকে পড়াতে থাকেন। সময় হলে, দু’জনে নাস্তা করে, বাকি থাকা খাবার দিয়ে দেন। বোনকে খেতে দিবে। নইলে প্রায়ই বোনকে না খেয়ে মাদরাসায় যেতে হয়। মাদরাসার বড় আপা তার অবস্থা জানেন। চেহারা দেখেই বুঝতে পারেন, মেয়েটা না খেয়েই মাদরাসায় এসেছে। গ্রামের গরীব মাদরাসা। অতিরিক্ত খাবার থাকে না বললেই চলে। তারপরও বড়আপা চেষ্টা করেন মেয়েটাকে কিছু খেতে দিতে।
.
বাড়িতে ভাবীর নিজের প্রতিষ্ঠা একটি মেয়েদের মাদরাসা আছে। ভাই একটা কাজ করেছেন, হাশেমের মাকে বলেকয়ে, মেয়েটাকে ভাবীর মাদরাসায় নিয়ে এসেছেন। মেয়েটা মেধাবী। তাকে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়া দরকার। ভাবীর মাদরাসায় প্রচ- টানাটানি। তবুও কোনও ছাত্রী এলে তিনি টাকার জন্য কাউকে ফিরিয়ে দেন না। যে যার রিযিক নিয়েই দুনিয়াতে এসেছে। আমার দায়িত্ব লেখাপড়ার দিকটা দেখা। রিযিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় আমি অহেতুক নাক গলাতে যাবো কেন?
.
ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া প্রতি ভাবীর বেজায় আগ্রহ। বিয়ের আগে তেমন পড়ার সুযোগ পাননি। বিয়ের পর ভাইয়ের কাছেই পড়া শুরু করেন। প্রথম দিকে ভাই প্রতি সপ্তাহে বাড়ি যেতে পারতেন না। ছুটি পেতেন না। ভাড়াও থাকত না। তারপরও বাড়ি গেলে, ‘দাম্পত্যজীবনের’ পাশাপাশি, ভাবীকে কিছু কিছু পড়তে সাহায্য করতেন। মোবাইল আসা পর্যন্ত এভাবেই গুটি গুটি করে লেখাপড়া করেছেন। মোবাইলের প্রসার ঘটার পর ভাবী ঘরে পড়তেন। কোথাও আটকে গেলে মোবাইলে সমাধান জেনে নিতেন।
.
মোবাইলের আরেকটু প্রসার হলে, ভাই যখন দরসে পড়াতেন, মোবাইলে কল দিয়ে রাখতেন। ওদিকে ভাবীও পড়া ধরতেন। যা তা ধরা নয়, অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে, গভীর অভিনিবেশের সাথে দরসের তকরীর (লেকচার) শুনতেন। কোথাও অস্পষ্ট থাকলে, পরে বুঝে নিতেন। এজন্য মোবাইলে অনেক টাকা বিল আসত। ভাবী মোবাইল খরচ তোলার জন্য রাতদিন পরিশ্রম করতেন। এটাসেটা বানিয়ে বিক্রি করতেন। পাটি বুনতেন। হাতে আরও নানাকিছু বানাতেন। চেষ্টা করলে, আল্লাহ তা‘আলা একটা না একটা উপায় বের করেই দেন।
.
ভাবী শুধু মোবাইলে পড়া শুনেই ক্ষান্ত হতেন তা নয়। পড়া ইয়াদ করতেন। ভাই বাড়িতে গেলে পড়া শোনাতেন। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হল, মাদরাসায় পরীক্ষা হলে, ঐ বিষয়ের একটা প্রশ্ন বাড়িতে আনাতেন। ভাইয়ার উপস্থিতিতে নিজে নিজে পরীক্ষায় বসতেন। লেখা শেষ হলে খাতা জমা দিতেন ভাইয়ের কাছে। অনেক সময় দেখা যেত মাদরাসার ‘নাম্বারে আউয়াল’ তালিবে ইলমের চেয়েও ভাবী ভালো লিখেছেন।
.
ভাবি একই কিতাব কয়েকবার করে পড়তেন। দ্বিতীয় বছর ভাইকে বলতেন, মাদরাসার প্রশ্নের পাশাপাশি তার জন্য আরও কঠিন করে, আলাদা প্রশ্নপত্র তৈরি করে দিতে। ভাইও যতটা কঠিন করা সম্ভব, করতেন। ভাবী অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সেই পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়ে যেতেন। একবার কোনও পরীক্ষা খারাপ হলে, দ্বিতীয়বার দিতেন। তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চমবারও পরীক্ষা দিয়েছেন কোনও কোনও বিষয়ে। বিস্ময়কর অধ্যবসায়।
.
নিজে পড়েই ক্ষান্ত হয়েছেন? জি¦ না। বাড়ির মেয়ে-মহিলাদেরও পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার একনাগাড়ে লেগে থাকার কারণে, চক্ষুলজ্জার খাতিরে হোক বা ইলমপিপাসু হয়েই হোক, অনেকেই পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ভাবীর একক প্রচেষ্টাতেই ভাইয়ের বাড়িতে আজ একটি মহিলা মাদরাসা গড়ে উঠেছে।
.
ভাবীর মাদরাসার মেয়েদের জন্য মায়েদের মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। ভাবীর নিজের তিন মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় বড় আলিমগন তাদের সন্তানের জন্য, বলতে গেলে, ভাইয়ের পায়ের উপর পড়া বাকি রাখেন। তারা ভাইয়ের মেয়েকে পুত্রবধূ করতে চান। ভাই এসব বিষয়ে নির্বিকার থাকেন। তার এককথা, আমার বিষয়বুদ্ধি কম। যেখানে দ্বীন, সেখানে আমি। আলিম বড় না ছোট, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। পাত্র যদি ইলমদার হওয়ার পাশাপাশি আমলদার হয়, তাহলে অত তদ্বির করতে হবে না, আমি এমনিই মেয়ে দিয়ে দেব।
.
ছোট মেয়েটা শরহে বেকায়া জামাতে পড়ে। মেয়েটা বড় বেশি ভাল। হুবহু তার মায়ের মতো হয়েছে। ভাই বলেন, আমার ছোট মা’টার পড়ালেখার বেজায় শখ। কিন্তু বিয়ের প্রস্তাবের জ¦ালায় মোবাইল রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। একজন মুরুব্বী তার ছেলের জন্য আমাকে রাজি করাতে না পেরে, আমার শায়খের কাছে পর্যন্ত গিয়েছে। শায়খ চমৎকার উত্তর দিয়েছেন,
‘যার মেয়ে সে বুঝবে, আমি কেন একজন বাবার উপর জোর খাটাতে যাবো’?
.
ভাবীর শিক্ষানীতি খুবই পরিস্কার। মেয়েরা প্রথমে এসে কুরআন হিফয করতে লেগে যায়। ফাঁকে ফাঁকে অল্প অল্প আরবী শেখে। বিকেলে অল্পস্বল্প বাংলা-ইংরেজি-উর্দু পড়তে লিখতে শেখে। ছোটখাট উর্দু কিতাব পড়তে থাকে। হাদীস মুখস্থ করতে থাকে। মূল মনোযোগ থাকে হিফযে। হিফয শেষ হতে হতে ভাষাশিক্ষার মৌলিক যোগ্যতা হয়ে যায়। উম্মুল মুমিনীনগনের জীবনী ভাল করে জানা হয়ে যায়। নবীজির সীরাত পড়া হয়ে যায়। রাহে নাজাত, তালীমুল ইসলাম, বেহেশতী জেওর ভাল করে পড়া হয়ে যায়। পাশাপাশি ইসলামের ইতিহাস, অল্পসল্প অংকের জ্ঞানও হয়। ভাবীর হাতের লেখা একেবারে মুক্তোর মতো। মেয়েদের লেখাগুলোও হয় দেখা মতো। লু‘লুউম মাকনূন। সুরক্ষিত মুক্তোসদৃস।
.
ভাবী চান, তার কাছে মেয়েরা দ্বীন ও জীবনের মৌলিক পাঠটুকু গ্রহণ করুক। প্রচলিত জামাতভিত্তিক পড়াশোনাতে তার আগ্রহ নেই। কারও আগ্রহ থাকলে তার কাছে পড়াশোনা শেষ করে, অন্য কোথাও পড়তে পারে। সে ব্যাপারে ভাবীর আপত্তি নেই। যারা পড়ালেখায় ভাল, তাদেরকে তিনি আরও পড়াশোনার উৎসাহও দিয়ে থাকেন। তবে সবার আগে তিনি প্রতিটি মেয়েকে প্রথমে একজন আদর্শ গুণবতী স্ত্রী তারপর ‘অনুকরণীয়’ মা হতে উদ্বুদ্ধ করেন। বেশি বেশি কুরআন, হাদীস আর সীরাত পড়তে উৎসাহ দেন। বুঝে বুঝে পড়তে বলেন। আমলের নিয়তে পড়তে অভ্যস্ত করে তোলার প্রয়াস চালান।
.
মাদরাসার মেয়েদের নিয়ে ভাবীর আলাদা সংসার। এই সংসার নিয়েই তাঁর চব্বিশ ঘণ্টা কাটে। মেয়ের মতো। সত্যি বলতে কি, মতো নয়, হুবহু মেয়ের মতোই তাদের আদর-যতœ করেন। দেখাশোনা করেন। ভাবী চেষ্টা করেন, একটা মেয়ে যেন মৌলিক যোগ্যতাগুলো অর্জন করতে পারে। মেয়েটার মধ্যে যেন দ্বীন ‘সহীহ ফাহম’ সঠিক বুঝ গড়ে ওঠে। মেয়েটা যেন দ্বীনকে অন্তর থেকে মানতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। মন থেকেই যেন একটা ‘পর্দা’ করে। কোনও পরিস্থিতিতেই যেন দ্বীনের ব্যাপারে আপোষ না করে ফেলে।
(please visit our website for part 5)
কোন মন্তব্য নেই