Header Ads

Header ADS

LIFE EXPERIANCE part 3



দিনলিপি-৩
(০৩-০৯-১৯)
সলাতুদ-দুহা!

১: দুহা মানে পূর্বা‎হ্ন। নয় বা থেকে বারোটার আগ পর্যন্ত বা এর কিছু এদিক সেদিক। তিউনিসিয়া একসময় অনেক বড় আলিম জন্ম দিয়েছে। বিশ্বের প্রথম ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ও তিউনিসে। জামেয়া যায়তূনা। ১২০ হিজরী, ৭৩৭ ঈসাঈতে প্রতিষ্ঠিত।২: ইলমে, শিল্প-সংস্কৃতিতে তিউনিস ছিল মুসলিম বিশ্বে অগ্রগামী ছিল। উসমানি খিলাফাহর অমনোযোগীতায়, তিউনিসের গণমানুষের জিহাদবিমুখতার কারণে, ১৮৮১ সালে ঘৃন্যতম উপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স ঢুকে পড়ে তিউনিসে। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত এই বর্বরোচিত দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকে। তারপর নামে স্বাধীন হলেও, ফ্রান্সই পর্দার আড়াল থেকে তিউনিসকে শাসন করে আসছে। তারা একের এক তাদের ক্রীড়নক শাসক বসিয়ে তিউনিসকে পুরোপুরি কব্জায় রেখেছে।
৩: ফরাসিরা ফ্রান্স দখল করলেও, তিউনিসের রাজতন্ত্র কায়েম রেখেছিল। উচ্ছেদ করেনি। হাবীব বুরকীবাহ (১৯০৩-২০০০)। তিউনিসের প্রথম প্রেসিডেন্ট। এর আগে তিউনিসে প্রত্যক্ষ শাসন করত হুসায়নী বংশের রাজারা। হুসায়নি মানে আহলে বাইত নয়, হুসায়নি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার নাম ছিল হুসাইন বিন আলি (১৬৬৯-১৭৪০)। তিনি উসমানি খিলাফার জানেসারীন বাহিনীর এক মুজাহিদের সন্তান ছিলেন। বাবা ‘আলী’ উসমানী খিলাফার কোনও দায়িত্ব পালনার্থে তিউনিসে এসেছিলেন। তখন তিউনিস শাসন করত মুরাদি সাম্রাজ্য (১৬৩১-১৭০২)।
৪: মুরাদি সাম্রাজ্য ছিল উসমানি খিলাফার অধীনে স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য। মুরাদি সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে ১৭০৫ সালে হুসাইন বিন আলি নিজেকে সিংহাসনের দাবিদার বলে ঘোষণা করে। সেই থেকে তিউনিস হুসায়নি সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসছিল। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, নানা কারণে, এই সাম্রাজ্যগুলো উসমানি খিলাফাহর সাথে দূরত্ব তৈরি করে আসছিল। খিলাফাহর সাথে যত দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল, ততই ইউরোপিয়ান উপনিবেশিক শক্তিগুলো তাদের প্রভাব বিস্তার করে চলেছিল।
৫: আব্বাসী খিলাফাহর আমল থেকে দেখা গেছে, ফরাসীরা খিলাফাহর বিরুদ্ধে সেই সময় থেকে লেগে ছিল। ক্রশেডের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, সালাহুদ্দীন আইয়ুবী রহ.-এর পর মামলুক সাম্রাজ্যের আমলেও, ফরাসির বারবার মুসলিম উপকূলে হানা দিয়ে গেছে। উসমানি খিলাফাহকে ক্রমশ দুর্বল করে, নিমূল করার পেছনেও ফরাসিদের কূটকৌশল কম ছিল না। এমনকি সর্বশেষ উসমানি খলীফা আবদুল মজীদ রহ.-কেও তারা সিংহাসনচ্যুতির পর, ফ্রান্সের নীস নগরীতে থাকতে দিয়েছিল। যাতে, বিচ্যুত খলীফা চোখের সামনে থাকে। বাড়তি কোনও নড়াচড়া করতে না পারে। বর্তমান মুসলিম বিশ্বের জন্য ভয়ংকরতম আপদ, ইরানের বর্তমান সরকারের প্রতিষ্ঠাতা গযবুল্লাহ খোমেনীকেও ফরাসিরা তাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছিল।
৫: ১৯৫৬ সালের ১৪ এপ্রিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হাবীব বুরকীবাহ রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হয়। তখনো দেশে রাজতন্ত্র চলছে। রাজা ছিলেন হুসাইনি সাম্রাজ্যের ১৯তম ও সর্বশেষ রাজা মুহাম্মাদ আমীন পাশা বাঈ। ১৯৫৭ সালের ২৫ জুলাই, রাজাকে পদচ্যুত করে, দেশকে পরিপূর্ণ প্রেসিডেন্টশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করে বুরকীবাহ।
৬: হাবীব ছিল পাশ্চাত্যলালিত উকিলসম্প্রদায়ের সদস্য। আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাব, ইংরেজ-ফরাসি ও ইউরোপীয় উপনিবেশিক শক্তিগুলো, মুসলিম বিশ্বে তাদের দখলদারিত্ব পাকাপোক্ত করার পর, পাশ্চাত্য ধাঁচের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল। সে শিক্ষাব্যবস্থার আওতায়, একদল গোলামশ্রেনী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের মধ্যে একটি দল ছিল ‘উকিলশ্রেণী’। এই উকিলরা নিজের দেশ থেকে বিলেত (ইউরোপে) যেত। উচ্চশিক্ষার্থে। এই উকিলশ্রেনীই পরবর্তীতে নিজ নিজ দেশে গিয়ে, স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করেছিল। বেশিরভাগ উপনিবেশিক দেশের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া লোক ছিল এই পাশ্চাত্যপালিত ‘উকিলসম্প্রদায়’। গান্ধী, নেহেরু, জিন্নার কথা ভাবলে চিত্রটা বুঝতে সুবিধা হবে। হাবীব বুরকীবাও প্যারিস থেকে আইন পড়ে এসেছিল। পাশ্চাত্য শক্তিগুলো প্রথম প্রথম উপনিবেশগুলো ধরে রাখার ছেষ্টা করলেও, পরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু তারা নিশ্চিন্ত মনেই ফেরত গিয়েছিল। তারা জানত, তাদের গৃহপোষিত উকিল সম্প্রদায় তাদের নিরাশ করবে না। এজন্যই পাকিস্তানে আজপর্যন্ত ইসলামী শাসন কায়েম হতে পারেনি। অথচ জিন্নাহর পাশাপাশি হক্কানী ওলামায়ে কেরামও পাকিস্তান আন্দোলনে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন।
৭: এই ফাঁকে একটা কথা বলে রাখি, হকপন্থী ওলামায়ে কেরাম, ও মুজাহিদীনকে কখনো কিছুতেই খিলাফাহ-জিহাদ-ইসলামী শাসনের জন্য কোনও ধরনের আপোষ করতে নেই। এই আপোষ সাময়িক কিছু নগদ ফল দিলেও, আখেরে পাওয়ার অংশ শূন্যই থেকে যায়।
৮: উপনিবেশিক দখলদারদের আরেকটি পোষ্য হল, সামরিক জেনারেলরা। মিসরে, আলজেরিয়ায়, তিউনিসে, পাকিস্তানের দিকে তাকালে বিষয়টা স্পষ্ট হবে।
৯: হাবীব বুরকীবাহ ৩১ বছর রাষ্ট্রপ্রধান ছিল। প্রধান উজীর যায়নুল আবেদিন বেন আলি ১৯৮৭ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। ২০১১ সালে আরব বসন্তের জোয়ারে বেন আলি সৌদি আরবে ভেসে গিয়েছিল।
১০: হাবীব বুরকীবাহ নিজেকে তিউনিসের ‘কামাল আতাতুর্ক’ মনে করত। সেমতে তিউনিসে ব্যাপক সংস্কারযজ্ঞও চালিয়েছিল। ধর্মকে যতটা সম্ভব রাষ্ট্র থেকে দূরে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। ইসলামবিরোধী শক্তির চরম আকাঙ্খিত তিনটি বিষয়ে আইন জারী করেছিল
ক: পুরুষের একাধিক বিয়ে নিষিদ্ধ করে, আনুষ্ঠানিকভাবে মুরতাদে পরিণত হয়েছিল।
খ: স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দিয়েছিল।
গ: মেয়েদের বিয়ের বয়েস ১৭ করেছিল। এই আইনের মাধ্যমেও সে মুরতাদে পরিণত হয়েছিল। তার মানে, মেয়ের সতের বছর হওয়ার আগে বিয়ে করলে, সে বিয়ে বৈধ হবে না। ১৭ হওয়ার আগে বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আল্লাহর বিধানে, মেয়েদের বিয়ের কোনও সুনির্দিষ্ট বয়েস নেই। জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে কোনও সময় বিয়ে বৈধ। আল্লাহ যা হালাল করেছেন, সেটাকে হারাম বা অবৈধ মনে করা, অবৈধ ঘোষণা দেয়া কুফরি। বর্তমানে পৃথিবীর বহুদেশ, এই বিধানের কারণে, জেনে বা না জেনে মুরতাদ হয়ে যাচ্ছে।
ঘ: জামেয়া যায়তুনাকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিল। জামেয়ায় পড়াশোনা করা আলিমদের দেশছাড়া করেছিল।
ঙ: রমজানে রোজা রাখার কারণে উৎপাদন কমে যায়, এই অজুহাতে রমজানে রোজা না রাখার জন্য ঘোষণা দিয়েছিল।
১১: এতক্ষণ যা বললাম, সেটা ছিল ভূমিকা। ছোট্ট একট ঘটনা বলার জন্য বসেছিলাম। কথা চলে গেল ইতিহাসের গলিগুঁজিতে। শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ নুফাইর (১৯০২-১৯৯৩)। তিউনিসের অত্যন্ত প্রভাবশালী দ্বীনি ব্যক্তিত্ব ছিলেন। জামেয়া যায়তুনার সন্তান। ফরাসিদের ভয়ংকরতম ইসলামবিরোধী শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে শায়খ সালেহ অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। তিনি মুসলিম মেয়েদের শিক্ষাদীক্ষার জন্য স্বতন্ত্র মহিলা মাদরাসা (مدرسة البنت المسلمة) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পুরো দেশজুড়ে শায়খের অপরিসীম সমাদর ছিল। হাবীব বুরকীবাহ শায়খকে নিজের ক্ষমতা সুসংহত রাখার কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। শায়খ আপোষ করেননি। হাবীব বুরকীবা আক্রোশে ফেটে পড়ে শায়খের পরিচালিত সমস্ত কার্যক্রম, মহিলা মাদরাসা বন্ধ করে দেয়। শায়খ সবসময় হাবীবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। শায়খকে সমস্ত পদ ও কার্যক্রম থেকে বাধ্যতামূলকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়। শায়খ আলজেরিয়ায় হিজরত করতে বাধ্য হন।
১২: শায়খ সালেহ একটা হাবীব বুরকীবাহ সম্পর্কে একটা ঘটনা বলেছেন। ফরাসিবিরোধী আন্দোলন চলাকালে, ইসলামী, অনৈসলামী, গণতান্ত্রিক, কমুনিস্ট সবাই একযোগে আন্দোলন করেছিল। সবদেশের মতো তিউনিসেও সে আন্দোলনে ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামপন্থীরা বেশ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৩: অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি, পাক-ভারতের মতো তিউনিসেও ওলামায়ে কেরাম নেতৃত্বের প্রশ্নে আস্থা রেখেছিলেন, একজন প্যারিসফেরত পোষা উকীল হাবীবের উপর। যেমনটা জিন্নাহর উপর সবাই আস্থা রেখেছিল। হাবীব তিউনিসের ওলামায়ে কেরামকে দৃঢ় আশ্বাস দিয়েছিল, সে ক্ষমতায় গেলে, পূর্ণ ইসলামী শাসন কায়েম করবে।
১৪: ক্ষমতায় গিয়ে হাবীব বেমালুম সব ভুলে তো গেলই, উল্টো ইসলামবিরোধী, কুরআনবিরোধী নানা আইন জারী করতে শুরু করল। এমনটাই হয়ে থাকে। মিসরেও এমনটা হয়েছে। জামাল আবদুন নাসের (১৯১৮-১৯৭০) মিসরের শক্তিশালী ইসলামী দল ইখওয়ানুল মুসলিমূনের সাথে ওয়াদাবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় গেল। তাকে সমর্থন দিলে, সে দেশে শরীয়াহ কায়েম করবে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। সে ক্ষমতায় গিয়ে ইখওয়ানের উপর এমন ভয়াবহ নির্যাতন শুরু করল, ইসলামের ইতিহাসে এমন ঘটনা কমই ঘটেছে।
১৫: তিউনিসের ওলামায়ে কেরাম যখন দেখল, হাবীব তার ওয়াদা পূরণ করছে না, তারা আলোচনা করে, একদল প্রতিনিধি পাঠাল হাবীবের কাছে। হাবীব এরমধ্যেই দেশে বিশুদ্ধতম ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শাসন জারি করে ফেলেছে। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ওলামায়ে কেরামের প্রতিনিধিদলকে বসানো হল। খবর দেয়া হল প্রেসিডেন্ট আসছেন। আলিমগন বসে আছেন। বসে আছেন। অনেকক্ষণ পার হওয়ার পরও প্রেসিডেন্টের দেখা নেই। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর, হাবীব এল। মাথায় টুপি। গায়ে তিউনিসের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় পাঞ্জাবী। হাতে তাসবীহ। যিকির করতে করতে এসে বসল। সবার কাছে সবিনয়ে ক্ষমা চেয়ে বলল,
-গোস্তাখি মাফ হোক। আমি সালাতুত দুহা আদায় করছিলাম। তাই আপনাদের মুবারক খেদমতে হাজির হতে বিলম্ব হয়ে গেছে।
ওলামায়ে কেরাম তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের এমন শান্ত-সৌম্য, নুরানী বেশভাশ দেখে একেবারে গলে গেলেন। হাবীব আবার মুখ খুলল,
-ক্ষমতার মসনদে না বসলে বোঝানো যাবে না। চট করে একটা দেশে ইসলামী শাসন কায়েম করা যায় না। অদৃশ্য অনেক বাধা থাকে। পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতিকূলতা থাকে। আমি আস্তে আস্তে সব ওয়াদা পূরণ করে ফেলব। একটু সময় দিতে হবে।
১৬: ওলামায়ে কেরাম রীতিমতো চমৎকৃত। মুগ্ধ। ওভারহোয়েলমড। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে বেরোতে বেরোতে সবার মুখেই স্বগতোক্তি,
-সুবহানাল্লাহ, যে লোক সলাতুদ দুহা পড়ে, তাকে অবিশ্বাস করার কোনও মানে হয়! এমন যিন্দাপীর, ওলীয়ে কামেল, দেশের প্রধান থাকলে, আর ভাবনা কিসের?
১৭: দেশবাসীও যারপরনাই আনন্দিত। পরিতৃপ্ত। নিশ্চিন্ত। ক’দিন পর, আলিমগনের যে প্রতিনিধিদল প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে গিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগকে গোপনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করা হল। অল্পকিছুকে অজানা কারাগারে নিক্ষেপ করা হল। দেশবাসী তখনো আহলাদে আটখানা; তাদের প্রেসিডেন্ট সলাতুদ দুহা আদায় করে!!!
১৮: মাওলানা কলীম সিদ্দীকী সাহেব দামাত বারাকাতুহুমের এক বয়ানে শুনেছি। তিনি বলেছেন,
-আমাদের শাকীল ভাই। আগে শিখ ছিলেন। এখন বেশিরভাগ সফরে আমাদের সাথে থাকেন। আমরা একদিন হারাম শরীফে বসেছিলাম। শাকীল ভাইও ছিলেন। আমাকে এসে বললেন, আমাদের পেছনে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ বসে আছেন। আমি তাকে ডেকে আনছি। আপনি তাকে বলে দিন, আমরা আল্লাহর কাছে দু‘আ করে তোমাকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বানাব। আপনাকে ওয়াদা দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, আপনি দাওয়াতের কাজ করবেন।
-শাকিল ভাই, আপনি বলছেন কী? আমি কীভাবে তাকে প্রধানমন্ত্রী বানাব? এসবের মালিক আল্লাহ। আমি এভাবে বলতে পারি, আল্লাহ তা‘আলা যাতে আপনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী বানান, সেজন্য আমরা আল্লাহর কাছে দু‘আ করব।
-আপনি কী বলছেন হযরত! আমি তাকে নিয়ে আসছি। আপনি মুলতাযামে গিয়ে দু‘আ করলেই হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। আপনার কোনও কথা শুনতে চাই না। আল্লাহ আপনার দু‘আ অবশ্যই কবুল করবেন।
১৯: শাকিল ভাই ছুটে গেলেন। নেওয়াজ শরীফকে নিয়ে এলেন। পরিচয় হল। তখন নেওয়াজ শরীফ সৌদি আরবে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন। কারগিল যুদ্ধের সূত্রে নেওয়াজ শরীফ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। আমি জানতে চাইলাম,
-আপনি এখন এখানেই থাকেন? নিয়মিত হারামে আসেন?
-জি¦, জেদ্দায় থাকি। প্রতিদিন তিনওয়াক্ত নামায হারামে পড়ি। আসর মাগরিব এশা। তারপর জেদ্দায় ফিরে যাই। প্রতি বৃহস্পতিবারে মদীনায় চলে যাই। জুমা ওখানে আদায় করি। পেয়ারা নবীজি সা.-এর রওজা যেয়ারত করে ফিরে আসি।
- মা শা আল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে কতবড় সৌভাগ্য দান করেছেন। আপনার কী মনে হয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে এখানে আছেন। দুই হারামে নিয়মিত হাজির হতে পারছেন। এটা কি আপনার জন্য ‘প্রমোশন’ নাকি ডিমোশন?
২০: আমি নেওয়াজ শরীফের সাথে এসব নিয়ে কথা বলছিলাম। জনাব শরীফের চেহারায় হতাশার গভীর ছাপ ফুটে ছিল। শরীরও ভঙ্গুর দেখা যাচ্ছিল। জনাব শরীফ অনিশ্চিত ভঙ্গিতে, নিজের প্রমোশন হয়েছে বললেন। কিন্তু তার অবয়ব বলে দিচ্ছিল, তিনি নিজেকে চরম বিড়ম্বিত ভাবছেন। পাশ থেকে শাকিল ভাই তাড়া দিয়ে বলে উঠলেন,
-হযরত সেই কথাটা বলুন না! সেই কথাটা বলুন!
আমি নেওয়াজ শরীফকে বললাম,
-শাকিল ভাই আপনাকে বলতে বলছেন, আল্লাহ যদি আপনাকে যদি আবার প্রধানমন্ত্রী বানান, তাহলে আপনি বিশে^র রাজা-বাদশাদের মধ্যে দাওয়াতের কাজ করবেন।
২১: আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই, শাকিল ভাই উষ্মা প্রকাশ করে বললেন,
-হযরত, আগর-মগর (যদি-কিন্তু) ছাড়াই বলুন, আমরা আল্লাহর কাছে দু‘আ করবো, আপনি অবশ্যই আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন।
সেই সময় কারো কল্পনাতেও ছিল না, নেওয়াজ শরীফ আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। জান নিয়েই টানাটানি ছিল। আমি তার কাছে ওয়াদা নিলাম। নেওয়াজ শরীফ বুঝে বা না বুঝে ওয়াদা করলেন।
২২: তিনচারদিন পর আমরা মদীনা গেলাম। রওজায়ে আতহারের কাছে, সুফফার দিকটাতে আমরা বসে আছি। আমাদের তিন-চার কাতার পেছনে নেওয়াজ শরীফ বসে ছিলেন। পেছন থেকে আমার টুপি দেখে, আমাকে চিনতে পারলেন। এগিয়ে এসে সালাম-মোসাফা করে বললেন,
-আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আপনি আমার প্রতি অনেক বড় এহসান (অনুগ্রহ) করেছেন। আমি সবসময় মনমরা হয়ে থাকতাম। চরম হতাশা আমাকে সারাক্ষণ কুরে কুরে খেত। আমি এতদিন ভাবতাম সৌদিতে আমার বাধ্যতামূলক অবস্থানটা ‘সাজাস্বরূপ’। কিন্তু আপনার কথা শুনে বুঝতে পেরেছি, এখানে আমার অবস্থানটা আসলে ‘জাযা’ বা পুরস্কারস্বরূপ।
২৩: এই ঘটনার কিছুদিন পর, নেওয়াজ শরীফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন। ভাই শাকিল সাথে সাথে ফোন করে উচ্ছ্বাসভরে বলল,
-হযরত দেখেছেন, দেখেছেন, কাজ হয়ে গেছে। আমি বলিনি, হেডঅফিসে বসে, মুলতাযামে আপনার দু‘আ কিছুতেই বৃথা যেতে পারে না?
২৪: নেওয়াজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরের ঘটনা। আমরা হারামে বসে আছি। পাকিস্তানের একজন এমপি এসেছেন। নেওয়াজ শরীফের খুবই কাছের লোক। শাকিল ভাই এমপি সাহেবকে ডেকে এনে বললেন,
-দেখুন জনাব, নেওয়াজ শরীফ আমাদের সাথে এই এই ওয়াদা করে গেছেন। তাকে স্মরণ করিয়ে দেবেন। হারাম শরীফের ওয়াদা পূরণ না করলে, ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে। আল্লাহ তাঁর হারামের ওয়াদা ভঙ্গ করা ক্ষমা করবেন না।
১৯: আমরা ঘুরেফিরে একটা কথাই বলি। বর্তমানে, ক্ষমতা, রাষ্ট্র, জিহাদ, শরীয়াহ ইত্যাদি প্রশ্নে কখনো কিছুতেই শী‘আ ও কাফেরকে একচুল পরিমাণও বিশ্বাস করা যাবে না। যারাই বিশ্বাস করেছে, ঠকেছে। কোনও কোনও দল হয়তো প্রাথমিকভাবে কিছু ইতিবাচক ফল পেয়েছে, কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যতই অপারগ অবস্থা হোক, কোনও হকদলের ইরানে আশ্রয় নেয়া, ভালো ফল বয়ে আনবে না। আমেরিকা-রাশার সাথে সমঝোতা সাময়িক কিছু ফল পাওয়া গেলেও, আখেরে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। আল্লাহু আ‘লাম।


কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.